ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: দেশের অন্দরে এমন কিছু নিঃস্বার্থ মানুষ আছেন যাঁরা আগে পিছে কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করেই উজাড় করে গরিবদের সাহায্য করে চলে। আর এই কর্মকাণ্ডের জন্য অনেকের কাছেই তাঁরা ভগবানের স্বরূপ হয়ে ওঠেন। আজকের প্রতিবেদনে আমরা এমনই একজন সেনা জওয়ান সম্পর্কে জানাতে চলেছি যিনি কিনা মাত্র ১ টাকায় এলাকার মানুষদের বিরিয়ানি খাওয়ান। কিন্তু কেন? আসল কারণ জানলে অবাক হবেন আপনিও।
সূত্রের খবর, করোনার সময় ৩২ বছর বয়সী ভারতীয় তরুণ সেনা শক্তি পালের দমদম এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি বিভাগে বদলি হয়। সেই সময় বেশ কিছুদিন এর জন্য শিলিগুড়ির বাড়িতে ছিলেন। সেখানে তাঁর মা, স্ত্রী ও ছোট্ট মেয়ে থাকে। তখন তিনি দেখেছিলেন এলাকার বহু মানুষ অর্থাভাবে না খেয়ে ছিল। অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে উঠেছিল যে শক্তির অন্তরাত্মা কেঁদে উঠেছিল। তখনই তিনি এই অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করার চিন্তা ভাবনা করেন। আর সেই নয়া ভাবনাতেই ঠিক করে নেন যে নিজের সাধ্যের মধ্যেই এবার বিনামূল্যে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন।
তৈরি করলেন নিজস্ব ফাউন্ডেশন!
জানা গিয়েছে, শুরুর দিকে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষকে বিনা পয়সায় রান্না করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি গড়ে তোলেন ইউনিক ফাউন্ডেশন। আর বর্তমানে এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সমাজের বিশিষ্ট মানুষ। সবমিলিয়ে এই সংস্থার সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৪০ জন। তাঁদের সহযোগিতাতেই এবার শিলিগুড়ির দরিদ্র মানুষদের জন্য বিনা পয়সায় দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন এই সেনা কর্মী।
কেন বিক্রি হয় ১ টাকার বিরিয়ানি?
বর্তমানে এলাকাতে যদি কোনও বাড়িতে অনুষ্ঠান হয় এবং সেখানে যদি খাবার বেঁচে যায় তাহলে সবার আগে খবর যায় শক্তিবাবুর ফাউন্ডেশনের কাছে। তখন আর অনুষ্ঠান বাড়ির খাবার নষ্ট হয় না। এক ফোনেই পৌঁছে যায় সংস্থার কর্মকর্তারা। সেই বেঁচে যাওয়া খাবার শহরের দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিলি করে দেন তাঁরা। এছাড়াও ১ টাকার বিরিয়ানিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাও আবার পেট পুরে। তবে প্রশ্ন ছিল একটাই, সবকিছুই যখন এখানে বিনা পয়সায় হচ্ছে তাহলে কেন বিরিয়ানি ১ টাকার পরিবর্তে নেওয়া হচ্ছে? সেই সূত্রে শক্তি পাল জানিয়েছেন, ‘দরিদ্র হলেও অনেকে বিনা পয়সায় কিছু নিতে কুণ্ঠা বোধ করেন। তাইতো তাঁদের কথা ভেবেই ১ টাকায় বিরিয়ানি বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
তবে শুধু এই সেনা কর্মী দরিদ্রদের খাবারের ব্যবস্থা করেন তা কিন্তু নয়। বাচ্চাদের পড়াশোনার ভারও বহন করে। পড়ুয়াদের জন্য তাই কাওখালিতে বিদ্যাছায়া খুলেছেন তিনি। সেখানে প্রতিদিন পড়াশোনা করে কিছু দরিদ্রপরিবারের সন্তান। পাশাপাশি করোনার সময় থেকে ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত জোগানের কাজও করে থাকে শক্তির এই সংস্থা। এছাড়াও অসহায় মানুষের থাকার জন্য জমি প্রদানের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে সেই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে ইতিমধ্যে স্থানীয় এক ব্যক্তি শক্তির এই সংস্থাকে দান করেছেন ১০ কাঠা জমি। স্থানীয় মানুষ শক্তির এই নিঃস্বার্থ সাহায্যকে ভগবানের দান হিসেবে দেখেন। এবং এলাকার গরীব মানুষেরা তাঁকে ভগবানের চোখে মানেন।