ইন্ডিয়া হুড ডেস্কঃ পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রে কয়েকটি ব্যতিক্রমী অণুজীব ছাড়া একমাত্র উৎপাদক হল উদ্ভিদ বা গাছ। গাছ না থাকলে শুধুমাত্র তৃণভোজী নয়, মাংসাশী প্রাণীরাও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই গাছের উপর নির্ভরশীল আমরা সকলেই। সেই কারণে হয়তো পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের অনেকটা লুকিয়ে রয়েছে বনাঞ্চলে। কিন্তু বন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সেই কারণে সংকটের মুখে পড়ছে জীবকূল। তবে যতদিন যাদব মোলাই পায়েংয়ের মতো বাস্তবের অরণ্যদেবরা বেঁচে থাকবেন, ততদিন হয়তো ধ্বংসের হাত থেকে রেহাই পেয়ে যাবে আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী।
ভারতের ‘ফরেস্ট ম্যান’ নামে পরিচিত যাদব মোলাই পায়েং অসমের ব্রহ্মপুত্র নদীর বালিয়াড়িতে প্রায় ১৩৪০ একর জমির উপর এক বিশাল বনভূমি গড়ে তুলেছেন। প্রকৃতির প্রতি অসামান্য ভালোবাসা ও পরিশ্রমের জীবন্ত উদাহরণ এই বিশাল বনাঞ্চল। প্রতিদিন ৪০ টি করে গাছ লাগিয়ে এই অসাধ্য সাধন করেছেন যাদব। আজ এই জঙ্গলে বসবাস করে লাখ লাখ প্রাণী। কিন্তু কেন বন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি? এর নেপথ্যে রয়েছে একটা দারুন গল্প।
সাপের মৃত্যু দেখে জঙ্গল তৈরির কথা ভাবেন যাদব
১৯৭৯ সালে যখন যাদব যখন ১৯ বছরের এক কিশোর, তখন হঠাৎ একদিন ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে প্রচুর সাপকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। একসাথে এত সাপের মৃত্যু দেখে শিউরে ওঠেন যাদব। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন যে অত্যধিক গরমের কারণেই সাপেদের মৃত্যু হয়েছে। তারপরেই গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন যাদব নিজেই। শুরুতে, বাঁশের চারা লাগানোর কাজ শুরু করেন তিনি। কারণ বাঁশ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পরিবেশকে ধীরে ধীরে সবুজ করে তোলে। এরপর, আস্তে আস্তে আরও বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা লাগাতে শুরু করেন।
বনাঞ্চল তৈরির জন্য লড়াই করেছিলেন যাদব
বনকে তৈরি করা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। তবে যাদব কোনো পরিস্থিতিতে হার মেনে নেন নি। রাত দিন এক করে গাছ লাগানো চলে। সবুজায়নের নেশায় তখন এই অসমীয়া কিশোর যেন বিভোর। একক প্রচেষ্টায় শুরু হওয়া এই উদ্যোগ দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ধীরে ধীরে এক বিশাল বনে পরিণত হয়। যা বর্তমানে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল।
যাদবের জঙ্গলে কি কি প্রাণী রয়েছে?
মোলাই পায়েংয়ের তৈরি এই জঙ্গল শুধুমাত্র একটি বনভূমি নয়, এটি পরিবেশ সংরক্ষণে এক অনন্য উদাহরণ। এই বনে বর্তমানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, গন্ডার, হরিণ, হাতিসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বসবাস করছে। এছাড়াও, এখানে প্রচুর পাখি, সরীসৃপ, এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী পাওয়া যায়, যাদের জন্য এই বন প্রকৃতির এক আশীর্বাদ।
যাদব পায়েং নাকি বাস্তবের ‘অরণ্যদেব’!
যাদব মোলাই পায়েংয়ের কাজ শুধু পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে নয়, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি প্রমাণ করেছেন যে একজন ব্যক্তি ইচ্ছাশক্তি এবং ধৈর্য ধরে প্রকৃতি এবং পরিবেশকে রক্ষা করতে পারলে পৃথিবীকে অনেক সুন্দর করে গড়ে তোলা সম্ভব। তাঁর এই উদ্যোগ আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং তাঁকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সম্মানেও ভূষিত করা হয়েছে।