ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: স্বপ্ন এবং জেদ এই দুই মূল উপাদান যদি জীবনযুদ্ধে না থাকে, তাহলে সেই লড়াই ক্রমেই মূল্যহীন হয়ে ওঠে। অনেকেই নিজের স্বপ্ন পূরণের দৌঁড়ে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে থাকে। কিন্তু অনেকেই সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে নিজের ভাগ্য নিজেই লিখে থাকেন। আজকের প্রতিবেদনে আমরা একজন নারীর সম্পর্কে জানব যিনি কিনা ভূগোলে স্নাতক হয়েও সংসারের হাল ধরতে মৃত বাবার চাষের জমিকে উপার্জনের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
বাবার চাষের জমিতে হাত লাগিয়েছে দুই বোন
ছোট থেকেই বেশ মেধাবী ছাত্রী ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা হাবড়ার আনখোলা গ্রামের সমাপ্তি মণ্ডল। দীর্ঘ আট বছর ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী ছিলেন বাবা। এরপরে ২০১৫ সালে তিনি মারা যান। সেই সময় পরিবারের হাল ধরেন সমাপ্তি ও তার মা। প্রথম থেকেই সংসারের খরচ, নিজেদের পড়াশোনা সবটাই এই চাষের উপর নির্ভর ছিল, আজও অবশ্য তাই আছে। সমাপ্তিরা ছয় বোন, চার বোনের বিয়ে হয়ে গেছে আগেই। এখন বাড়িতে কেবল দিদি দীপা ও বোন সমাপ্তি। দু’জনেই ভুগোলে অনার্স। দিদি ইংরেজি মাধ্যম এবং বোন বাংলা মাধ্যম। ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে সেই যে মাঠে যাওয়া শুরু করেছিলেন সেখান থেকে বাবার অনুপস্থিতিতে জলে ভেসে যাওয়া সংসারকে টেনে তুলেছেন দুই বোনে। ধান থেকে সরষে, সব রকম চাষ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সমাপ্তির। জমিতে বাদামও হচ্ছে, সঙ্গে পটল, আলু, কড়াইশুঁটি থেকে নানান মরসুমি সবজি বাগান করেছে বাড়ির পাশের জমিতেও। চাষের কাজে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফলন বেড়েছে, আয় হয়েছে আগের থেকে অনেকটাই বেশি।
সমাপ্তির পাশে দাঁড়িয়েছে কৃষি দফতর
সমাপ্তির এই তুখোড় লড়াইতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কৃষি দফতর। হাবড়া ব্লক ১ কৃষি দফতর থেকে সবরকম সহযোগিতা পেয়েছেন সমাপ্তি। এই প্রসঙ্গে কৃষি আধিকারিক কুসুম কমল মজুমদার জানান, চাষের ক্ষেত্রে সমাপ্তির আগ্রহটা বেশি। সেই আগ্রহ দেখে কৃষি দফতর সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, শুধু কৃষি দফতর নয় পঞ্চায়েত, বিধায়কের তরফ প্রযুক্তিগতভাবে সহযোগিতা, যন্ত্রপাতির উপর ভর্তুকি ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে সমাপ্তিকে।
তবে চাষের থেকে উপার্জন করে শুধুমাত্র খাওয়া-পরা থাকা সহ বাকি খরচ টানতে আপাতত দুই বোন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দিয়েছেন বেশ কয়েকটা পরীক্ষাও। তবে আপাতত চাষবাস নিয়েই মশগুল দুই বোন এবং মা। কারণ জীবনযুদ্ধে এখনও অনেকটা লড়াই বাকি আছে তাঁর।