ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: ভারতের আনাচে কানাচে অলিতে গলিতে লুকিয়ে রয়েছে বহু পুরানো যুগের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি। যেগুলি খোঁজা কখনও কখনও সহজ হয়ে উঠলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আবার কঠিন হয়ে পড়ে। আর সেগুলিকে সংরক্ষণের জন্য রাখা হয় মিউজিয়াম বা জাদুঘরে। তেমনই দেশের মধ্যে ইতিহাস এবং সংস্কৃতিতে মোড়া এমনই একটি রাজ্য হল কলকাতা। সেখানে মিউজিয়াম বা জাদুঘরের প্রসঙ্গ আসলেই সবার প্রথমে মাথায় আসে ভারতীয় জাদুঘর বা সংগ্রহশালা। তবে এই মিউজিয়াম ছাড়া আরও এমন বেশ কিছু মিউজিয়াম রয়েছে যেখানে দুষ্প্রাপ্য ও ঐতিহাসিক সব সামগ্রী ছড়িয়ে রয়েছে। চলুন, আজকের প্রতিবেদনের মাধ্যমে সম্পূর্ণটা জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
নেতাজি ভবন
বাঙালির কাছে বড় আবেগের জায়গা কলকাতার এই নেতাজি ভবন। ১৯০৯ সালে এলগিন রোডের এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসুর বাবা জানকীনাথ বসু। আর এখানেই ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনী সুভাষচন্দ্রকে গৃহবন্দি করে রেখেছিল। কিন্তু এই অগ্নিবীরকে আটকে রাখা কার সাধ্য? তাইতো সকলের চোখে ধুলো দিয়ে মাঝ রাতে বহু দুর্গম পথ অতিক্রম করে দেশ ছেড়ে চলে যান তিনি। এরপর দেশ স্বাধীনের পর ১৯৬১ সালে এই বাড়িটিকেই সরকার জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্রের রূপ দেয় ‘নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো’ হিসেবে। এই বাড়িতে তাঁর ব্যবহার করা অনেক অমূল্য জিনিসপত্রও সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। রয়েছে তাঁর জামাকাপড়, খাট, জুতো, স্যুটকেস। এমনকি ১৯৪১ সালে অন্তর্ধানের দিন যে গাড়িটি ব্যবহার করেছিলেন সুভাষচন্দ্র, তা-ও সযত্নে রয়েছে এই বাড়িতে। ছুটির দিনে ঝাঁকে ঝাঁকে পর্যটক আসেন এই জাদুঘরটি দেখতে। সোমবার ছাড়া প্রতি দিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাদুঘরটি সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকে।
মার্বেল প্যালেস
কলকাতার বুকে আরও এক অসাধারণ স্থাপত্য নিয়ে ইতিহাসের নানা অধ্যায় বহন করে চলেছে মার্বেল প্যালেস। এটি আসলে জোড়াসাঁকোর কাছে মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে রয়েছে। যা দেখতে অনেকটা বিশাল রাজকীয় প্রাসাদ এর মত। এখানে যেমন একটি মনোরম বাগান আছে তেমনি এখানে রয়েছে ছোট্ট একটি চিড়িয়াখানা। সেখানে রকমারি পাখি, হরিণের দেখা মিলবে। ১৮৩৫ সালে রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক এই প্রাসাদটি তৈরি করেন। এই পর্যটন স্থানটিও সোমবার বাদে বাকি দিনগুলিতে সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৪ টে পর্যন্ত খোলা থাকে।
আলিপুর জেল জাদুঘর
কলকাতার মিউজিয়ামগুলির তালিকায় অন্যতম হল আলিপুর জেল জাদুঘর। ব্রিটিশ আমলে ১৯০৬ সালে তৈরি হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেল, যা পরবর্তীকালে আলিপুর সংশোধনাগার নামেও পরিচিত। এখানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু, কাজি নজরুল ইসলাম, যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত এবং আরও বহু বিপ্লবী থেকে বিশিষ্টরা এখানে থেকেছেন ৷ তাই এক কথায় বলা যায় এই জেলেই বন্দি রয়েছে বাংলা তথা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ৷ বিভিন্ন স্থাপত্য, ভাস্কর্য, তথ্যের মাধ্যমে সাজিয়ে তোলা হয়েছে এই মিউজিয়ামটি। বিপ্লবীদের থাকার কুঠুরিগুলিকে আলাদা করে সংরক্ষিত করা হয়েছে ৷ এখানেও সোমবার বাদে প্রতিদিন ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এবং ধ্বনি-আলোর অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টার পরে।