ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: কোনও বড় নেতা মন্ত্রীর উদ্যোগ নয়, একজন সাধারণ মানুষ হয়ে সম্পূর্ণ নিজের সঞ্চিত টাকা খরচা করে গ্রামবাসীর পাশে দাঁড়ালেন বয়স্ক ব্যক্তি। এই মুহুর্তে রমরমিয়ে চলছে ভোটের বাজার। আর তার সঙ্গে দ্বিগুণ গতিতে চলছে ভোট প্রচার। এই সময় রোদ, ঝড়, জলকে অতটা কেয়ার না করেই সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ভোট প্রার্থীরা। কিন্তু সম্প্রতি প্রত্যন্ত এক গ্রামের সাধারণ মানুষ নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেভিওয়েট নেতাদের হারিয়ে জিতেনিলেন গ্রামের মানুষের মন।
সাধারণ মানুষের স্বার্থে এগিয়ে এল আরেক সাধারণ মানুষ
ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের নিজামপুর এলাকার। কয়েকশো টাকা নয়, একেবারে সঞ্চিত ২৪-২৫ লাখ টাকা খরচা করলেন গ্রামের মানুষের স্বার্থে! নাম গোপাল মল্লিক। নিতান্ত ছাপোষা চেহারার এই মানুষের জীবন যেমন সাধাসিধে তেমনই তাঁর বেসভূষাও অতি সাধারণ। পায়ে হাওয়াই চটি, পরনে লুঙ্গি,পাতলা ফিনফিনে শার্ট। নদীতে ডিঙি পারাপার করিয়ে সংসারে তাঁর খাবার জোটে। এই পারাপার কাজের মধ্যেই নজরে আসে গ্রামের মানুষদের এক যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। বর্ষাকালে যখন রাস্তা ঘাট কাদায় মাখা থাকে তখন বেশ অসুবিধায় পড়ে রাস্তা পারাপারকারীদের। বিশেষত কোলে বাচ্চা নিয়ে মহিলাদের পারাপার, বয়স্কদের কাদা পথ পেরিয়ে যাতায়াত করা যেমন তাঁকে কষ্ট দিয়েছে । তেমনই প্রসূতিদের কষ্টও তাঁর নজর এড়ায়নি। আর সেই সমস্যা অন্তর থেকে উপলব্ধি করতে পেরেই তিনি তিল তিল করে বাঁধ বানানোর জন্য জমাতে শুরু করেন টাকা।
দাসপুরে দ্বিতীয় হুগলি সেতু!
এই বাঁধ নির্মাণের জন্য বেশ কয়েকবার প্রশাসনের দরবারে উপস্থিত হয়েছিল গ্রামের একাংশ মানুষ। কিন্তু কোনো কিছুতেই কোনো লাভ হয়নি। অন্যদিকে দেদার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল এবং বিজেপি প্রার্থী দেব এবং হিরণ। শেষে তাঁদের উপর আস্থা হারিয়ে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর আদলে জমানো টাকা দিয়েই আস্ত সেতু তৈরি করে নিলেন গোপাল বাবু। গ্রামের মানুষের মন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় করে নিলেন তিনি। কাঁসাই নদীর উপর এই সেতুর নির্মাণের ফলে নিজামপুর তিলন্দ, বালক রাউত, রবিদাসপুর, সৈয়দ করিম, নন্দনপুর, বসন্তপুর, গোবিন্দনগরের মতো প্রায় ১৫ – ২০ টি গ্রামের মানুষের কষ্টের অবসান হল।
খুশি সাধারণ মানুষ
গত মঙ্গলবার দুপুরে সাড়ম্বরে পুজো দিয়ে এ সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছিল। সেতু পেয়ে বেজায় খুশি গ্রামের মানুষ। এহেন উদ্যোগের জন্য গোপাল মল্লিককে রীতিমতো সাধুবাদ জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে গ্রামের অনেকাংশই সরাসরি প্রশ্ন করছেন সাধারণ একজন ব্যক্তি নিত্যদিনের কষ্ট বুঝতে পেরে জমানো অর্থ দিয়ে এমন সেতু বানাতে পারলেও রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের পক্ষে তা করে দেওয়া গেল না কেন? অথচ গ্রামের মানুষ বারে বারে আবেদন জানিয়েছিলেন এই সুবিধার জন্য।