গোরস্থান, বাস ডিপোতে রাত কাটানো মানুষটাই জিতিয়েছেন টিম ইন্ডিয়াকে! প্রকাশ্যে আনলেন কোহলি

Published on:

raghu-raghavendra

ইন্ডিয়া হুড ডেস্কঃ ১৩ বছর পর টিম ইন্ডিয়া বিশ্বজয়ী হয়েছে। প্রতিটা প্লেয়ার অদম্য ইচ্ছে, টিকে থাকার জেদের ফলেই কাঙ্ক্ষিত সাফাল্য এসেছে। বিরাট কোহলির ব্যাট গোটা বিশ্বকাপে শান্ত থাকলেও, ফাইনালে গর্জে ওঠে। যার জেরে ভারত সাউথ আফ্রিকার সামনে বড় রানের লক্ষ্য দেয়। এরপরও জসপ্রীত বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়া অর্শদীপ সিংদের বোলিংয়ের সামনে আত্মসমর্পণ করে প্রোটিয়ানরা। তবে, সহজেই ভারতের হাতে জয় তুলে দেয়নি। শেষ ওভার পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা ছিল।

কিন্তু শুধুই যে প্লেয়ারদের কারণে এই সফলতা এসেছে, তা বলা ভুল হবে। টিম ইন্ডিয়ার প্রতিটি সদস্য যেমন কোচ, সাপোর্ট স্টাফ, মেডিক্যাল টিম সবারই অক্লান্ত পরিশ্রমে ভারত এবার বিশ্বজয়ী হয়েছে। আর সাপোর্টিং স্টাফের মধ্যে এমন একজন ছিল, যিনি সকলের আড়ালে থেকে টিম ইন্ডিয়ার জয়ের জন্য যথা সম্ভব চেষ্টা করে গিয়েছেন। তিনি কোনও প্লেয়ার বা কোচ নন, তিনি হলেন থ্রোডাউন স্টাফ রাঘবেন্দ্র। এক সময় রাঘবেন্দ্র গোরস্থান ও বাস ডিপোতে রাত কাটাতেন। আজ তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় টিম ইন্ডিয়ার একের পর এক সাফল্য হাসিল করছে।

WhatsApp Community Join Now

সংঘর্ষে ভরা জীবন

রাঘবেন্দ্র কর্ণাটক রাজ্যের বাসিন্দা। ছোটোবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি একটা আলাদাই ভালোবাসা ছিল তাঁর। রাঘবেন্দ্রর বাবা ছেলের এই ক্রিকেট প্রেম একদমই মেনে নিতে পারতেন না। কিন্তু রাঘবেন্দ্রও ছিলেন নাছোড়বান্দা। বাবা স্কুল শিক্ষক ছিলেন, তিনি চেয়েছিলেন ছেলেও পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করুক। কিন্তু রাঘবেন্দ্র বাবার স্বপ্ন পূরণ করার বদলে স্কুল এমনকি বাড়িও ছেড়ে দেন নিজের স্বপ্নপূর্ণ করবেন বলে। তিনি মুম্বই গিয়ে সচিন তেন্দুলকরের কোচ রমাকান্ত আচরকরের থেকে শিক্ষা নিতে চেয়েছিলেন।

রাঘবেন্দ্র মুম্বই তো পৌঁছে যান, কিন্তু তাঁর থাকার কোনও জায়গা ছিল না। আর এই কারণে কখনও মন্দির, কখনও গোরস্থানে রাত কাটাতেন তিনি। এছাড়াও বাস ডিপোতেও অনেক রাত কাটিয়েছেন রাঘবেন্দ্র। মুম্বইয়ে ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন ছিল রাঘবেন্দ্রর, কিন্তু তা পূরণ হয়নি। সেখানে সফলতা না পেয়ে তিনি ব্যাঙ্গালুরু চলে যান এবং সেখানে গিয়ে ন্যাশানাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে থ্রো ডাউনের কাজ শুরু করেন। আর সেখান থেকেই তিনি টিম ইন্ডিয়ার থ্রোডাউন হয়ে কাজ শুরু করেন।

২০০৮-এ বদলে যায় ভাগ্য

২০০৮ সালে BCCI রাঘবেন্দ্রর সাথে চুক্তি করে। এরপর তিনি ভারতীয় দলের প্রশিক্ষক সহায়ক হিসেবে কাজ শুরু করেন। রাঘবেন্দ্রর কাজ ছিল নেটে প্লেয়ারদের বল থ্রো করে প্রশিক্ষণ দেওয়া। দ্রাবিড় তাঁর কাজে মুগ্ধ হন এবং তারপরেই BCCI রাঘবেন্দ্রকে টিম ইন্ডিয়ার সাথে যুক্ত করে নেয়। এরপর রাঘবেন্দ্র সচিনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেটে প্রশিক্ষণ দিতেন। দ্রাবিড় আর সচিনের সুপারিশে রাঘবেন্দ্রর সাথে পাকাপাকি চুক্তি করে নেয় বিসিসিআই। ২০১১ থেকেই রাঘবেন্দ্র টিম ইন্ডিয়ার সাথে যুক্ত।

কি বললেন বিরাট কোহলি?

ভারতীয় দলের থ্রোডাউন বিশেষজ্ঞ রাঘবেন্দ্রর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন বিরাট কোহলিও। তিনি বলেন, ‘২০১৩ থেকে আমি জোরে বোলারদের খুব ভালো মতোই খেলছি, তাঁর প্রধান কারণ হল রাঘবেন্দ্র।’ বলে দিই, নেটে রাঘবেন্দ্র ১৫০-র গতিতে বল ছুঁড়ে ব্যাটস্ম্যানদের প্র্যাকটিস করান। আর এই প্র্যাকটিসের কারণেই টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটাররা এখন আগের থেকে অনেক ভালো জোরে বল খেলতে পারেন।

প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাঘবেন্দ্র

ভারতীয় দলের এই থ্রোডাউন মাষ্টারকে অনেক দেশ থেকেই তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এমনকি IPL থেকেও অফার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাঘবেন্দ্র টিম ইন্ডিয়া ছাড়া আর কারও সাথেই যুক্ত হতে চাননি।

বাছাই করা গুরুত্বপুর্ন খবর পেতে গ্রুপে যুক্ত হোন