শ্বেতা মিত্র, বোলপুরঃ একদিন হোক কিংবা দু’দিনের ছুটি পেলেই ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির পা যেন বাড়িতে টিকতে চায় না। হাতে একটু ছুটি পেলেই একদম কাছেপিঠে যেমন দীঘা, পুরি নয়তো শান্তিনিকেতন ঘুরতে চলে যান ভ্রমণপিপাসুরা। আর এমনিতেই তো বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে থাকেই। তারওপর এখন আবার বর্ষাকালে। যে কারণে কোথাও ঘুরতে যাবেন না তা তো হতেই পারে না। আজ এই প্রতিবেদনে কথা হবে শান্তিনিকেতন নিয়ে। আর শান্তিনিকেতন নিয়ে কথা হবে সোনাঝুরি হাটের প্রসঙ্গ উঠবে না, তা তো হতেই পারে না। যারা শপিং লাভার তাদের কাছে এই সোনাঝুরি হাট এক প্রকার প্যারাডাইসের তুলনায় কম কিছু না।
তবে এবার এই সোনাঝুরি হাট নিয়ে উঠল বড়সড় এক অভিযোগ, যা শুনলে আপনিও হয়তো আকাশ থেকে পড়বেন। আপনিও কি আগামী দিনে শান্তিনিকেতন এবং সোনাঝুরি হাটে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? তাহলে আজকের এই প্রতিবেদনটি রইল শুধুমাত্র আপনার জন্য।
‘বেআইনি’ সোনাঝুরি হাট
বর্তমানের সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই শান্তিনিকেতনের বুকে থাকা সোনাঝুরি জঙ্গলে হাট বসে। শুধু তাই নয় কোপাইয়ের ধারেও এই হাটের কিছুটা অংশ বসে। যারা শপিং করতে ভালোবাসেন তাদের কাছে এই জায়গাটি প্যারাডাইসের তুলনায় কম কিছু নয়। শাড়ি, ব্লাউজ, কুর্তি থেকে শুরু করে পাঞ্জাবি, ঘর সাজানোর এমন কোনও জিনিস নেই যে আপনি এখানে পাবেন না। তবে এই সোনাঝুরি হাটের বিরুদ্ধেই বেআইনি কাজ করার অভিযোগ উঠল। আর অভিযোগ তুলেছে সরকারি কর্মতীর্থ হাট। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। সরকারি কর্মতীর্থ হাটের অভিযোগ, বেআইনি সোনাঝুরি হাটের জেরে তাঁদের ব্যবসা মার খাচ্ছে।
সোনাঝুরি খোয়াইয়ের হাটে যে ব্যবসায়ীরা বসেন তাদের প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টাকা আয় হয় কিন্তু সেই টাকা কোথায় যায় সেই নিয়ে হিসাব থাকে না। এমনকি বনদপ্তর থেকে শুরু করে পুরসভা সবার একই বক্তব্য যে তাদের রাজস্বে এই টাকা কিন্তু ঢোকে না। ফলে প্রশ্ন উঠছে সেই টাকাগুলো কোথায় যাচ্ছে?
হিসেব মিলছে না লক্ষ লক্ষ টাকার!
এমনিতে জঙ্গল ধ্বংস করে এই হাট বসা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সরব হয়ে আসছেন বোলপুর-শান্তিনিকেতনের পরিবেশ প্রেমীরা ৷ এই প্রসঙ্গে বোলপুর পুরসভার চেয়ারপার্সন পর্ণা ঘোষ বলেন, “আমাদের খাতে সোনাঝুরির হাট থেকে কোনও টাকা আসে না। অথবা, আমরা হাট পরিচ্ছন্ন রাখার পরিষেবা দিয়ে থাকি।” অন্যদিকে, বন দফতরের অতিরিক্ত জেলা আধিকারিক (এডিএফও) সোমনাথ চৌধুরী বলেন, “এই হাট নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে রিপোর্ট দেব ৷ আমাদের খাতে হাট থেকে কোনও টাকা আসে না।”
কোথায় যাচ্ছে টাকা?
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে এতগুলি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেওয়া টাকা কোথায় যাচ্ছে? এই বিষয়ে হাট কমিটির সদস্য তন্ময় মিত্র বলেন, “আমাদের এই হাট বহু দিনের। প্রতি সপ্তাহে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে নেওয়া হয় ৷ ওই টাকায় হাট পরিষ্কার করা হয় ৷ বাকি টাকা আমাদের মধ্যেই থাকে। কারও কোনও সমস্যা হলে তখন দেওয়া হয়।”
ধুঁকছে কর্মতীর্থ হাট
এদিকে ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের পর থেকে সোনাঝুরির খোয়াইয়ের হাটের জেরে ধুঁকতে শুরু করেছে কর্মতীর্থ হাট। কর্মতীর্থ হাটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সুনিতা বিশ্বাস, সুমিতা খাতুনরা বলছেন, “আমাদের এটা সরকারি হাট। আর সোনাঝুরির ওই হাট বেআইনি ৷ ওই হাটের জন্য আমাদের বিক্রি নেই ৷ ওই হাটে প্রচুর টাকার লেনদেন হয়। পর্যটকেরা ওখানেই যান ৷ আর আমরা ঋণ নিয়ে জিনিস কিনে ব্যবসা করছি, আমাদের বেচাকেনা নেই।” উল্লেখ্য, বর্তমানে সোনাঝুরির জঙ্গলে খোয়াই হাটে প্রায় ২০০০ ব্যবসায়ী বসেন বলে জানা গিয়েছে ৷ অভিযোগ, বর্তমানে বেশিরভাগই বহিরাগত ব্যবসায়ী। আদিবাসী শিল্পী-ব্যবসায়ী নেই বললেই চলে ৷