ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচনের পর্ব গত মাসে মিটে গেলেও ভোট পরবর্তী হিংসার মুখে গোটা বঙ্গ। কখনও বিরোধী দল, শাসক দলকে হুমকি দিচ্ছে, তো কখনও আবার শাসক দল বিরোধী দলকে হুমকি দিচ্ছে। যার জেরে সন্ত্রাসের অন্ধকার যেন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। তাই এই আবহে রাজ্যে দুর্গাপুজো পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীদের বঙ্গে থাকার দাবি জানানো হয়েছে।
এদিকে টানা ৫০ দিন গরমের ছুটি কাটিয়ে অবশেষে গত ১০ জুন রাজ্যের সমস্ত সরকারী স্কুল এবং সরকার পোষিত স্কুলগুলো খোলার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় স্বাভাবিক পঠনপাঠন এখনও শুরু হয়নি। ফলত ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটেছে। অন্যদিকে ভোটের জন্য রাজ্যে ৪০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা রয়েছে। প্রথম দিকে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এই মঙ্গলবার পর্যন্ত বাহিনী রাখা হবে। কিন্তু পরে হাই কোর্টের নির্দেশে সেই সময়সীমা আরও বাড়ানো হয়েছে। উচ্চ আদালত জানায়, ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস মোকাবিলায় আগামী ২১ তারিখ পর্যন্ত বাহিনী থাকবে। তাই এই বিষয়ে এবার ক্ষোভ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যের তরফ থেকে প্রশ্ন উঠল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের থাকা-খাওয়ার জায়গা কোথায় হবে।
কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে রাজ্য, কেন্দ্রের তরজা!
এই বিষয়ে গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য এবং কেন্দ্র, উভয়ের কাছেই রিপোর্ট তলব করে আদালত জানতে চাইল স্কুলের পরিবর্তে কোথায় রাখা যাবে এই ৪০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী? এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষের আইনজীবী কুমারজ্যোতি তিওয়ারি জানান, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রাখার দায়িত্ব রাজ্যের। এইমুহুর্তে ২৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বাকি অংশকে অন্য জায়গায় রাখা হয়েছে।’ অন্যদিকে পাল্টা মন্তব্য করে রাজ্যের আইনজীবি জেনারেল কিশোর দত্তের বক্তব্য, ‘নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি উঠে গিয়েছে। এখন কেন রাজ্য বাহিনী রাখার দায়িত্ব নেবে? কেন্দ্রের উচিত তাদের কোনও জায়গায় বাহিনী রাখা।’
হাইকোর্টের বড় নির্দেশ
অবশেষে দুই তরফের দুইরকম যুক্তি শোনার পর বিচারপতি টন্ডন জানিয়েছেন, ‘রাজ্য ও কেন্দ্রের মতাদর্শ আলাদা থাকতে পারে। কিন্তু শিশুদের কোনও মতাদর্শ নেই। তাদের শিক্ষার কথা আগে চিন্তা করতে হবে। এ ভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে দায় না ঠেলে দু’জনেই সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে। বাহিনী রাখার বিকল্প জায়গা খুঁজতে হবে।’ এছাড়াও আদালত স্পষ্ট ভাবে জানায়, শিশুদের পড়াশোনার যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সেই দিক বিচার করে স্কুলের বিকল্প হিসাবে কোথায় বাহিনী রাখা হবে, তা নিয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্র দুজনকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এবং আগামী ২১ জুন ওই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানায় আদালত। এবং ওইদিনই পরবর্তী শুনানিতে বাহিনী রাখার কী বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তার রিপোর্ট আদালতকে দিতে হবে বলে বড় নির্দেশ বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের।