ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: রাজ্যে তৃণমূল সরকারের শাসনব্যবস্থায় একের পর এক দুর্নীতির কলঙ্ক যেন লেগেই রয়েছে। চাকরিনিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে গোরুপাচার কাণ্ড সমস্ত ঘটনাতেই রাজ্যের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট। সম্প্রতি রাজ্য সরকার এবং হাইকোর্টের সম্পর্কে ফের আগুন লাগল। বিনা দোষে একজন সরকারী শিক্ষকের বেতন বন্ধ এবং গুন্ডামির আচরণে রাজ্য সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করল হাইকোর্টের বিচারপতি।
সূত্রের খবর, ২০১২ সালে বীরভূমের তেঁতুলবেড়িয়া জুনিয়র হাইস্কুলে ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ মিয়া। পরে ২০১৬ সালে তিনি ওই স্কুলেরই টিচার ইনচার্জের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পরিচালন কমিটির সঙ্গে ২০১৬ সাল থেকেই তাঁর মতানৈক্য শুরু হয়। সেখানকার স্থানীয় তৃণমূল নেতা রাজা রাম ঘোষ ওই স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি ছিলেন। অভিযোগ, কমিটির কয়েকজন সদস্য মিলে স্কুলের খেলার মাঠে অবৈধ নির্মাণ শুরু করেন। এই কাজে সৌমেন্দ্রনাথ বাবু বাঁধা দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে। শুধু তাই নয় পুলিস তাঁকে শাসানিও দেয় যে স্কুলে ঢুকলে গ্রেফতার করতে বাধ্য করা হবে।
শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ শিক্ষকের
দিনের পর দিন স্কুলে এই ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরকে বিষয়টি জানালে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি ওই শিক্ষকের অভিযোগ, পরবর্তী সময়ে পদত্যাগ করার জন্য তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করাও হয়েছে। যখন তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেন। যদিও সেই পদত্যাগ পত্রের ভিত্তিতে স্কুল কোনও রকম সিদ্ধান্তের না জানানোয় ওই শিক্ষক পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন এবং শিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন করেন তাকে যেন স্কুলে যোগদান করানো হয়।
রাজ্য সরকারের আচরণে ভয়ংকর নির্দেশ রাজ্য সরকারের
এই ঘটনা প্রসঙ্গে ওই শিক্ষকের আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী আদালতে জানান, আজ পর্যন্ত ওনাকে শোকজ, সাসপেন্ড কিছুই করা হয়নি। ফলত স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছু না জানিয়ে বেতন বন্ধ করে দিতে পারে না। একজন স্কুলের শিক্ষককে কিছু না জানিয়ে তার বেতন বন্ধ করা সম্পূর্ণ নিয়ম বিরুদ্ধ, এমনকি স্কুল যেসব অভিযোগ এনেছিল তার কোনও প্রমাণ নেই। উপরন্তু কোনও শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে তৎক্ষণাৎ কোনো ব্যবস্থা না নিলে এবং তিন বছর অতিক্রান্ত হলে তার বিরুদ্ধে আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। সেই নিয়মের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন বন্ধ করে ৭ বছর বসে থাকতে পারে না। এই মন্তব্যের ভিত্তিতে পাল্টা কোনও জবাব দিতে পারেনি রাজ্য সরকার এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের আইনজীবীরা।
আরও পড়ুনঃ লক্ষ্মীর ভান্ডার তো হলই, এবার কর্মরত মহিলাদের বড় উপহার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের! হচ্ছে প্রশংসা
রাজ্য সরকারের এ হেন ব্যবস্থায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হাইকোর্টের বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়। তিনি রাজ্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে বেতন বন্ধ করে বসে থাকতে পারেন কি? আইন তো অন্য কথা বলছে,আপনারা এই ভাবে বসে থাকতে পারেন না।’ এছাড়াও তিনি নির্দেশ দেন, শিক্ষককে অবিলম্বে স্কুলে যোগদান করাতে হবে এবং ২০১৭ থেকে সমস্ত বকেয়া সুদ সমেত শিক্ষককে বেতন মিটিয়ে দিতে হবে।