প্রীতি পোদ্দার: গত ৯ আগস্ট আরজি কর কাণ্ডে ঘটে যাওয়া দ্বিতীয় বর্ষের সেই তরুণী ছাত্রীর খুন ও হত্যা মামলায় একের পর এক ভয়ংকর তথ্য তুলে ধরছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা CBI। যদিও CCTV ফুটেজ এর মাধ্যমে গত ১০ আগস্ট সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু তারপরে আর কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। অবশেষে গত শনিবার, তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুন মামলায় আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এবার আদালতে আরজি কর কাণ্ডের এক ভয়ংকর তথ্য তুলে ধরল CBI।
১৫ লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার চাপ পড়েছিল নির্যাতিতার ওপর!
কলকাতা পুলিশ প্রথম দিকে এই ঘটনার তদন্তভার গ্রহণ করলেও হাইকোর্টের নির্দেশে সেই দায়িত্ব চলে যায় CBI এর কাঁধে। সেই ব্যাপারে তদন্ত করতে গিয়েই তিন সপ্তাহ পরে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরা হল। জানা গিয়েছে মৃতাকে নাকি প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাসপাতালেরই কয়েক জন। বলা হয়েছিল এই ১৫ লক্ষ টাকা গবেষণাপত্র জমা করতে পারার ‘অনুমতি’ বাবদ হিসেবে দিতে হবে। এবং বাকিটা চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাশ করার ‘ফি’ হিসেবে দিতে হবে। কিন্তু কারা মৃতাকে এই নির্দেশ দিয়েছিল, সেই বিষয়ে কোনো সঠিক তথ্য এখনও মেলেনি।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, এই টাকা একদমই দিতে রাজি হননি মৃতা। যার দরুন গত এক বছর ধরে তাঁকে নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছিল হাসপাতালে ডিউটি দেওয়ার সময়ে। যখন তখন ডিউটি টাইম দিয়ে দেওয়া হত। এবং সেই কারণেই মৃতা তাঁর ঘনিষ্ঠ এবং বন্ধুদেরকে জানিয়েছিলেন যে ডিউটি করতে ভাল লাগে না তার। এমনকি মৃতা সেই হাসপাতালের কয়েকজনকে পাল্টা বলেছিলেন, ‘উপরমহলে’ সবটা লিখিত ভাবে তিনি জানিয়ে দেবেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে তার ফলেই হয়ত এই পরিণতি হতে হয়েছে মৃতার। কিন্তু প্রশ্ন এখানেও উঠছে। মৃতা যেই উপরমহলের কথা বলেছে সেই বা কে।
রাত ১২টার পর থেকে একাধিক বার যাতায়াত করেছে নির্যাতিতা!
কিন্তু এই সমস্ত তথ্য এর প্রমাণ জোগাড় করতে নেমেই বার বার ধাক্কা খেতে হচ্ছে CBI কে। তাই সে রাতে ঠিক কী ঘটেছিল, সেটাই গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। এছাড়াও গত ৯ আগস্ট রাতে আরজি করের জরুরি বিল্ডিংয়ে উপস্থিত থাকা কয়েক জনের স্টাফের ফোন থেকে পাওয়া কিছু তথ্য এবং ভিডিয়ো এ ক্ষেত্রে তদন্তকারীদের সাহায্য করছে বলে জানা গিয়েছে। আর সেই সূত্রেই মৃতার এক সহপাঠীর ফোন থেকেই মিলেছে টাকা দাবি করার এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রায় সাড়ে তিনশো জনের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে দোতলার বার্ন ইউনিট থেকে ছ’তলার জেনারেল মেডিসিন বিভাগের মধ্যেই রাত ১২টার পর থেকে একাধিক বার যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে নির্যাতিতা ওই তরুণী চিকিৎসককে।
লিফট নিয়ে রহস্য!
এছাড়াও সেদিন রাতে কর্মরত ছিলেন চার জন মেল রেসপিরেটরি কেয়ার ইউনিট টেকনিশিয়ান, ১২ জন ‘ওয়ার্ড মাসি’। রেফার হওয়া রোগীর কাগজ, মৃত্যুর শংসাপত্র, ভর্তির টিকিট-সহ নানা জরুরি নথি নিয়ে যাতায়াত করেছেন অন্তত সাত জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। সব মিলিয়ে মহিলা এবং পুরুষ নার্সিং স্টাফ ছিলেন সাত জন। এ ছাড়া সাত জন ইন্টার্ন, হাউস স্টাফ এবং পিজিটি প্রায় সারা রাতই যাতায়াত করেছেন এই দুই তলের মধ্যে। এছাড়াও হাসপাতালের ভিতরের দিকের ছোট লিফট নিয়েও তৈরি হয়েছে জল্পনা। এমনিতে এই লিফট জরুরি বিল্ডিংয়ের এক তলা থেকে উপরের তলগুলির মধ্যে দিনের বেলা যাতায়াত করে। মূলত চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মীরা এটি ব্যবহার করেন। কিন্তু এক নার্সের দাবি, সেই রাতে নাকি কোনও এক জরুরি কারণে নার্সিং স্টেশনের মধ্যে থাকা সেই লিফট চালু করা হয়েছিল। আপাতত এই সমস্ত তথ্য প্রমাণ নিয়েই একটি একটি করে ধাঁধার সমাধানের চেষ্টায় রয়েছে CBI।