ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: গত ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনার পর থেকে গত ১৬ আগস্ট থেকে টানা ১৫ দিন CBI জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছিল অন্ধকারময় সেই মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপকে। অবশেষে চলতি সপ্তাহের গত সোমবার আবার তাঁকে তলব করা হয় সিজিও কমপ্লেক্সে। এবং সেখান থেকেই মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে আর্থিক তছরুপের কারণে গ্রেফতার করা হয়।
তবে শুধু সন্দীপ নয় তাঁর সঙ্গে আরও তিন জনকে পাকড়াও করল CBI। ধৃতদের নাম সুমন হাজরা, বিপ্লব সিংহ এবং আফসর আলি। এঁদের মধ্যে আফসর সন্দীপের নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। এদিকে CBI এর হাতে উঠে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। CBI তদন্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে থাকার সময়ে সন্দীপের সঙ্গে পরিচয় হয় বিপ্লব সিংহর। সন্দীপ ঘোষের হাত ধরে বিপ্লব প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভেন্ডর হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে আবার তাঁর মাধ্যমেই সুমন হাজরার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় সন্দীপের। আলিপুর আদালতে ওই তিনজনের যোগাযোগের নথি পেশ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
সন্দীপের কৃপাতেই মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় আসেন বিপ্লব!
সন্দীপ যখন যে হাসপাতালে বদলি হতেন, তখন সেখানেই কাজের বরাত পেতেন সুমন এবং বিপ্লবের সংস্থা। একইভাবে পরে আরজি কর হাসপাতালে সন্দীপ ঘোষ বদলি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লবকেও নিয়ে আসেন সেখানে। স্থানীয় সূত্রে খবর, বিপ্লবের বাবা কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন। বিপ্লব আঁকাআঁকি করতেন সেই সূত্রে হাসপাতালে টিনের প্লেটে নম্বর লেখা থেকে শুরু করে বেড নম্বর লেখার বরাত পেতেন। ওই কাজ করতে করতে চিকিৎসার সরঞ্জাম সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেন বিপ্লব। গতকাল সন্দীপ ঘোষের বাড়ি তদন্তের পাশাপাশি বিপ্লব সিংহের বাড়িও চিরুনি তল্লাশি করা হয়। সেখানেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে।
বিপ্লবের টেন্ডার নিয়ে উঠে এল বিস্ফোরক তথ্য
CBI সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপ্লব বেশ কিছু সংস্থা তৈরি করেছে। সেগুলি বিপ্লবের পরিবার, কর্মচারী, পরিজন ও বন্ধুদের নামে তৈরি করা হয়েছে। বিপ্লব মা তারা ট্রেডার্স, বাবা লোকনাথ ও তিয়াশা এন্টারপ্রাইজের নামে টেন্ডার চাইতেন। এর পর সন্দীপ ঘোষের পছন্দ অনুযায়ী বিপ্লবের সংস্থাই বরাত পেত। তার বিনিময়ে সন্দীপ ঘোষ মোটা টাকার কমিশন পেতেন বলে অভিযোগ। এছাড়াও আরজি করের বিভিন্ন আধিকারিকের মাধ্যমে ওয়ার্ক অর্ডার যেত বিপ্লবের কাছে। কিন্তু কাজ হয়ে গেলেও সেগুলি ওই অফিসারদের হাতে দেওয়া হত না। একমাত্র যখন বিপ্লব অ্যাকাউন্টস বিভাগ থেকে টাকা তুলতে যেতেন, তখনই সেই নথিপত্রগুলি হাতে পেতেন আধিকারিকরা।
তবে বিপ্লবের থেকেও এক কাঠি উপরে হাওড়ার সুমন হাজরা। তিনিও বিপ্লবের মতই টেন্ডার এর কাজ করতেন। তবে সুমন হাজরার মেডিক্যাল সংস্থার মাধ্যমে যে শুধু হাসপাতালের সরঞ্জাম কেনা হত, তা নয়। তার সঙ্গে সুমনের মেডিক্যাল সংস্থার নামে কেনা হত সোফা সেট, রেফ্রিজারেটরও। অভিযোগ, ধৃত তিন জনকে বেআইনি ভাবে হাসপাতালে ক্যাফেটেরিয়া, পার্কিং লট-সহ নানা সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলেন সন্দীপ। জানা গিয়েছে, ভবিষ্যৎ এ আরও নানা ভয়ংকর তথ্য উঠে আসতে চলেছে।