প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। প্রতিবাদের ঝড়ে আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছে গোটা দেশ। এমনকি বিদেশেও এই ঘটনার প্রতিবাদ মিছিল বের হয়েছে। আপাতত এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে মোট ৩ জন। কলকাতা পুলিশ, ঘটনার পরের দিন CCTV ফুটেজ এর মাধ্যমে সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে গ্রেফতার করা হয়েছিল সর্বপ্রথম। তারপর CBI এর হাতে গত শনিবার টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে আরজি কর কাণ্ডে খুন এবং ধর্ষণ কাণ্ডে গ্রেফতার করে CBI। যদিও এর আগে আরজি কর কাণ্ডে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল সন্দীপ ঘোষকে। তবে এবার ঘুরে ফিরে ফের আরও একবার খবরের শিরোনামে উঠে এল ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র প্রসঙ্গ।
গত কয়েক বছর ধরেই ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে। বলা হয় রাজ্যের গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থা নাকি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এই লবি। তাই তাঁদেরকে তুষ্ট করে রাখতে সমস্ত নির্দেশ পালন করতে হয়। আর যারা ‘দাসত্ব’ মেনে নেয় না তাদের নাকি বদলির খাঁড়া নেমে আসে। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের লবির নাম উঠল সর্বপ্রথম উঠে আসে ‘এস পি দাশ’ অর্থাৎ অস্থি-শল্য চিকিৎসক শ্যামাপদ দাশ এর প্রসঙ্গ। তাঁর বিরুদ্ধে চিকিৎসক মহলের একাংশের অভিযোগ তিনিই নাকি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ‘অলিখিত অভিভাবক’ হয়ে উঠেছেন।
নিয়ম বিরুদ্ধ হলেই বদলি!
স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক কর্তাব্যক্তি থেকে চিকিৎসকের দাবি, উত্তরবঙ্গ লবি এতটাই ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছে যে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসন কার্যত এই লবিই পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে। এখানে লবির অনুগতদের নিয়মিত ‘পুরস্কৃত’ও করা হয়। আর যাঁরা নিয়ম বিরুদ্ধ হন, তাঁদের ‘শাস্তি’ হিসাবে কোথায় পোস্টিং দেওয়া হবে, বা অন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সবটাই লবি ঠিক করে দেয়। তাই বলা যায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যত বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার সবেতেই উত্তরবঙ্গ লবির অবদান রয়েছে।
এদিকে আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার পরে সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগের চার ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে পুনর্বহালের নেপথ্যেও ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র প্রভাব কাজ করেছে বলেই অভিযোগ। আর সেখানে উঠে এসেছে শ্যামাপদের নাম। তবে শ্যামাপদ অবশ্য নিজেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ‘নিয়ন্ত্রক’ বলে মানতে চাইছেন না । তাঁর দাবি, “আমি তো নবান্ন বা স্বাস্থ্য ভবনে বসি না। তা হলে নিয়ন্ত্রণ করব কী ভাবে? আমি সবসময় নিজের প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত থাকি।” এছাড়াও শ্যামাপদের দাবি করেছেন, “ আমি মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসক বলে অনেক সময় অনেকেই বদলি নিয়ে নানা অনুরোধ করা হয়। কিন্তু সব কিছু তো আমি করতে পারি না। যতটা পারি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাই।”
অনৈতিক কাজ করার কথা কাউকে বলেননি শ্যামাপদ!
অন্যদিকে চক্ষু চিকিৎসক সুশান্ত রায় ও দাপুটে নেতা অভীক দে-র প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি বলেন, ‘‘সুশান্তর সঙ্গে পরিচয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী হিসেবে। ওই প্রাক্তনীদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। ওঁর মাধ্যমেই অভীকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে।’’ তাঁকে অভিকের এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রসঙ্গে শ্যামাপদ বলেন, নিশ্চয় অভীক কিছু অনৈতিক কাজ করেছেন। যার ফলে এত ঘটনা রটছে। তবে তিনি কোনও অনৈতিক কাজ করেননি। তিনি আরো বলেন, “এ বার ঠিক করে ফেলেছি, প্র্যাকটিস ছাড়া আর কোনও বিষয়ে থাকব না। কারণ, আমার পারিবারিক সম্মানহানি হচ্ছে।”