ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: দেখতে দেখতে ১ মাস হয়ে গেল। কিন্তু এখনও তিলোত্তমার সুবিচার পেল না রাজ্যবাসী। তবে আন্দোলনের আগুন নিভে যায়নি এখনও। বরং সেই আগুন যেন এবার বড় আকার ধারণ করেছে। দফায় দফায় রাত দখলের লড়াইয়ে রীতিমত কালঘাম ছুটিয়ে দিচ্ছে প্রশাসনের। রাজপথে দলবদ্ধভাবে নামছে সাধারণ মানুষ। কারণ এই লড়াইটা এখন কোনো লিঙ্গভিত্তিক বা জাতিভিত্তিক এর জায়গায় নেই, এই লড়াই এখন সমাজের সব স্তরের মানুষের। তাইতো যতদিন না সুবিচার পাচ্ছে এই আন্দোলন বিক্ষোভ দীর্ঘায়িত হবে।
এদিকে তরুণী চিকিৎসকের হত্যাকাণ্ডে সুবিচারের দাবিতে কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকরা। আর এই আবহেই এবার বিনা চিকিৎসায় ওই হাসপাতালেই এক দুর্ঘটনাগ্রস্ত যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠে এল তাদের বিরুদ্ধে। সূত্রের খবর, কোন্নগরের বেঙ্গল ফাইন মোড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন বিক্রম ভট্টাচার্য নামে এক যুবক। গত শুক্রবার ভোরের বেলায় তাঁর দুই পায়ের উপর দিয়ে লরি চলে যায়। প্রথমে শ্রীরামপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কলকাতায় ট্রান্সফার করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। তাঁকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লাগাতার রক্তক্ষরণে নাকি বিনা চিকিৎসায় শেষমেশ রাত ১২টা নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর।
কী বলছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়?
যার ফলে তিলোত্তমা কাণ্ডের আবহেই এবার বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিতর্ক বাঁধে। তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুণাল ঘোষ একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন তাঁর সোশ্যাল সাইটে লিখেছিলেন, ‘যদি প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হয়, তাহলে তা গঠনমূলকভাবে করা উচিত। সহানুভূতি ও মানবতার সঙ্গে করা উচিত। যাতে নিষ্ক্রিয়তা বা অবহেলার মাধ্যমে আর কোনও জীবন ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে।’ এছাড়া তিনি আরও বলেন যে ‘জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি অত্যন্ত ন্যায্য। কিন্তু তা বলে আন্দোলনের ফলে চিকিৎসার অভাবে মানুষের মৃত্যুও তো অপরাধযোগ্য হত্যাকাণ্ডের সমতুল্য।’ আর এই পোস্ট একদমই মেনে নিতে পারেনি জুনিয়র ডাক্তারেরা।
এদিকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের সুপার দাবি করছে যে বিক্রম ভট্টাচার্য নামে ওই যুবককে আসলে আরজি কর মেডিক্যালে রেফার করাই হয়নি। বরং তাঁকে পাঠানো হয়েছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। তবে পরিবারের লোক আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর অন্তত ২ ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় নাকি ফেলে রেখেছিলেন যুবককে। তার পর তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। তবে এই দাবি যে ভুল তা সকলের সামনে বলে বসেন আরজি করের MSVP। তিনি জানান, চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় নথি রয়েছে তাদের কাছে।
পাল্টা জবাবে কী জানাল জুনিয়র চিকিৎসকরা?
তাই পাল্টা জবাব দিতে জুনিয়র চিকিৎসকরা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে জানান, ‘আপনি ৬ সেপ্টেম্বর এক্স হ্যান্ডলে লেখেন যে আরজি করের বিক্ষোভের জেরে কোন্নগরের এক যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় টানা ৩ ঘণ্টা পড়েছিলেন। কিন্তু আদতে সকাল ৯টা ১০ মিনিট থেকে সাড়ে ১২টায় ওই যুবকের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তাঁর চিকিৎসা চালানো হয়েছে। আপনার ভিত্তিহীন এবং অযাচিত দাবির জন্য চিকিৎসকরা বিপদে পড়তে পারেন। তাই আমাদের দাবি, নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আপনার এই ভুল তথ্য প্রত্যাহার করুন’। প্রসঙ্গত, এর আগে সুপ্রিম কোর্ট, কলকাতা হাই কোর্ট এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান।