ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা বেজে ২০ মিনিটে জীবনাবসান হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নিজের পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। জানা যায়, সোমবার থেকে জ্বর হয় তাঁর। গতকাল অর্থাৎ বুধবার রাত থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। রাতেই ছুটে আসে চিকিৎসকের দল। তারপর আজ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বাড়ে। চলে আসে অ্যাম্বুলেন্সও। কিন্তু, তারমধ্যেই জীবনের সময় ফুরিয়ে আসে বুদ্ধদেব বাবুর।
COPD রোগে আক্রান্ত ছিলেন বুদ্ধদেব বাবু!
জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বেরিয়ে আসার পর সক্রিয় রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে দূরে চলে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর সবার আড়ালে পাম অ্যাভিনিউর ছোট্ট ফ্ল্যাটে বাকি জীবনটা কাটিয়ে এসেছেন তিনি। আর এই একাকীত্ব জীবনে COPD রোগ যেন ধীরে ধীরে জাল বিস্তার করছিল তাঁর ফুসফুসে। যার জেরে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। গত এক-দু’বছর আগে দৃষ্টিশক্তিও বেশ ঝাপসা হয়েগিয়েছিল তাঁর। কার্যত শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
সেইসময় তাঁর সহকারী কিংবা স্ত্রী খাইয়ে দিতেন তাঁকে এবং যত্নও নিতেন। বুদ্ধদেববাবুর মস্তিষ্ক সচল থাকলেও চোখে একদমই দেখতে পেতেন না সেভাবে। এর আগে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে। কখনও নিউমোনিয়াজনিত কারণে তো আবার কখনও করোনাভাইরাসে। পাঠানো হয়েছিল ভেন্টিলেশনেও। কিন্তু, অফুরন্ত মনের জোরে এবং সকলের প্রার্থনায় তিনি বারবার ফিরে এসেছিলেন তাঁর অনুগামীদের কাছে। কিন্তু এবার তাঁর শেষ রক্ষা হল না।
মৃত্যুশোকে শোকস্তব্ধ কাছের বন্ধু বিমান
প্রসঙ্গত, ২০০০-২০১১ সাল-টানা ১১ বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর মৃত্যুবার্তা যেন ডেকে এনেছে বাংলার এক রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তির সুর। স্মৃতিতে খালি ভেসে আসছে তাঁর সাদা ধুতিতে অ্যাম্বাসেডর থেকে নেমে আসা রাজকীয় মেজাজে রাইটার্সে গট গট করে প্রবেশের সেই মুহূর্ত। আজ গোটা বাংলার কাছে এ যেন এক খুবই দুঃখের দিন। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু তাঁর মৃত্যুশোকে শোকস্তব্ধ। মুখ থেকে যেন বেরোতেই চাইছে না কোনও কথা। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি ভীষণ ভীষণ ক্রিটিক্যাল। আমি তখন সবে ঘুম থেকে উঠেছি, তখনই ফোন আসে। দীর্ঘদিন মানুষের স্বার্থে কাজ করেছেন। ক্ষতি হয়ে গেল। বন্ধু চলে গেলে ক্ষতি হয় না!’
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এর এই অকাল প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন আজ বুদ্ধদেববাবুর দেহ তাঁরা সংরক্ষণ করবেন। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ দেহ নিয়ে গিয়ে সংরক্ষণ করা হবে। আসলে দিল্লি থেকে অন্যান্য রাজ্য থেকে অনেকেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছে। এরপর কাল বিকাল চারটে নাগাদ আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে শেষ যাত্রা হবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে, মৃত্যুর পরে দেহ দান করার কথা ছিল বুদ্ধদেব বাবুর, তাই সেই অনুযায়ী তাঁর শেষ ইচ্ছামতো, দেহ গবেষণার জন্য দান করা হবে।