প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত ৯ আগস্ট আরজি কর হাসপাতালে দ্বিতীয় বর্ষের চিকিৎসকের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ উঠেছে। আর ওই দিন থেকেই গোটা রাজ্য সহ গোটা দেশ তিলোত্তমার সুবিচার চাইতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল। চারিদিকে কর্মবিক্ষোভ, মিটিং মিছিলে রাজপথ ছেয়ে গিয়েছে। তার উপর তিলোত্তমার সুবিচার এর আশায় কর্মবিরতিতে রয়েছেন রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকরা।
কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠক
গত সোমবার অর্থাৎ ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, পরের দিন অর্থাৎ ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে তাঁদের কাজে ফিরতে হবে। কিন্তু তবুও রাজ্য সরকার ৫ দফার দাবি না মেনে নেওয়ায় কাজে ফেরেননি জুনিয়র চিকিৎসকরা। তবে এই নিয়ে গতকাল আরজি কর মামলার শুনানিতে নতুন করে কিছু জানায়নি সুপ্রিম কোর্ট। এদিকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর, সোমবার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠকে বসেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দল। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ওদের পাঁচটা দাবির মধ্যে একটা আদালতে বিচারাধিন। বাকি চারটের মধ্যে তিনটে আমরা পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আর এই বৈঠকে আন্দোলনকারীরাও জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর হওয়ার পরেই কাজে ফিরবেন তাঁরা।
জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি মেনে কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল-সহ চার জনকে সরানোর কথা জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুযায়ী গতকাল বিকেল ৪ টের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে সেই পদ থেকে সরিয়ে নতুন সিপি করা হয়েছে মনোজ ভার্মাকে। পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের একাধিক পদেও রদবদল করা হয়েছে। তাতে অনেকের ধারণা ছিল এইবার হয়তো জুনিয়র চিকিৎসকরা কাজে ফিরবেন। কিন্তু এই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করল না আন্দোলনকারীরা। গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার, মধ্যরাতে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন আন্দোলনকারীরা। এবং জানান কাজে ফেরার আগে তাঁরা ৪ ও ৫ নম্বর দাবি পূরণের বিষয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান। তারজন্য আজ সকালের মধ্যে এ ব্যাপারে মুখ্য সচিবের কাছে ইমেল পাঠানো হবে।
জুনিয়র চিকিৎসকদের আরও দাবি!
সেই বৈঠকে স্পষ্ট করে তাঁরা জানান, “হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে আমাদের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে, তাতে আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তাই আমরা চাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৌখিক প্রতিশ্রুতি না দিয়ে হাসপাতালের সুরক্ষা-নিরাপত্তা কাজে সুনিশ্চিত করুন।” এছাড়াও আন্দোলনকারীরা আরও জানান যে, “সরকারি হাসপাতালগুলিতে এখনও পর্যাপ্ত সংখ্যক CCTV কিংবা পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন নেই। এমনকি বহু জায়গায় নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই কাজে ফেরার আগে এগুলো পূরণ হওয়া জরুরি।’’ পাশাপাশি এদিন রোগী কল্যাণ সমিতি গঠন এবং স্বচ্ছতা মেনে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিও তোলেন তাঁরা।