ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: গত ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আরজি করের নির্যাতিতার ধর্ষণ ও খুনের মামলার শুনানি ছিল ৷ সেই শুনানিতে শীর্ষ আদালত পরেরদিন অর্থাৎ ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫ টার মধ্যে জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু তিলোত্তমার বিচারের কোনো মীমাংসা না হওয়ায় জুনিয়র চিকিৎসকরা ১০ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যসচিবের পদত্যাগ-সহ ৫ দফা দাবি নিয়ে স্বাস্থ্যভবনের সামনে অবস্থান করে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা ৷ যা নিয়ে আরও চরমে উঠল চিকিৎসকদের সঙ্গে প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব।
লাইভ স্ট্রিমিং-র দাবি মানতে নারাজ প্রশাসন
ইতিমধ্যেই আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করতে তিন দিন অপেক্ষা করেছেন বলে কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নবান্নর সভাঘরে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকের সব বন্দোবস্ত করা থাকলেও শেষ পর্যন্ত কোনো বৈঠকই হল না। তার অন্যতম কারণ হল লাইভ স্ট্রিমিং। আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা যখন স্বচ্ছতার স্বার্থে বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল।
সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এই বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন হওয়ায় এর লাইভ স্ট্রিমিং করা সম্ভব নয় ৷ তবে সরকারের পক্ষ থেকে ভিডিয়ো রেকর্ডিং করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল ৷ কিন্তু সরকারের এই দাবি কিছুতেই মেনে নিল না জুনিয়র চিকিৎসকরা৷ ফলস্বরূপ বৈঠক না করেই নবান্ন থেকে ফিরে এল জুনিয়র চিকিৎসকরা। জানা গিয়েছে, গতকাল বিকেল ৪টে ৪৫ মিনিটে নবান্নে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর। এমনকি তাঁদের জন্য বাসেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী বিকেল ৪:৩০ মিনিটে বাসে চড়ে নবান্নের পথে রওনা দিলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। কিঞ্জল নন্দ, অনিকেত মাহাতো, আরিফ আহমেদের নেতৃত্বে নবান্নে পৌঁছল জুনিয়র চিকিৎসকদের বাস।
মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা করে দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের!
কিন্তু জুনিয়র চিকিৎসকদের বৈঠকে যোগ দেওয়ার ৩০ জন প্রতিনিধির শর্ত মানলেও লাইভ স্ট্রিমিং এ রাজি নয় নবান্ন। যার ফলে বৈঠকে বসতে রাজি হলেন না জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাই তাঁদের সঙ্গে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার ও এডিজি সাউথ বেঙ্গলের, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। কিন্তু তাতেও বরফ গলল না। সবশেষে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “আমি দু’ঘণ্টা ধরে বসে আছি ৷ টানা তিনদন ধরে বসে আছি ৷ আমার সর্বোচ্চ সরকারি আধিকারিকদের নিয়ে বসে আছি ৷ এমনকী যাঁদের নিয়ে ডাক্তারদের অভিযোগ, বিক্ষোভ তাঁদের কাউকে এই বৈঠকে রাখা হয়নি ৷” এছাড়াও তিনি এই আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেছেন যে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের৷ কারণ তাঁরা তাঁর ভাই-বোন ৷ আর ছোটদের ক্ষমা করাই সৌজন্যতা ৷”
বিচার নয়, চেয়ারের দাবি চিকিৎসকদের!!
এদিন বৈঠক না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে। আমাদের সরকারকে অনেক অসম্মান করা হচ্ছে। অনেক কুৎসা, অপপ্রচার হয়েছে। মানুষ তিলোত্তমার বিচার চাইতে এসেছে। আশা করি মানুষ বুঝতে পারছেন ওরা বিচার চায় না। ওরা চায় চেয়ার। আমি মানুষের স্বার্থে পদত্যাগ করতে রাজি আছি। আমার মুখ্যমন্ত্রীর পদ চাই না। আমি চাই তিলোত্তমার বিচার পাক। সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাক। আর তা না হলে আপনাদের যেমন আন্দোলন আছে, পরিবারগুলো আমাদের কাছে কৈফিয়ৎ চাইলে, দিতে হবে। সাধারণ মানুষ জবাব চাইলে, আমরাও জবাব দেব। তৈরি আছি।”
আরও পড়ুনঃ ৫৩ শতাংশ আসন ফাঁকা! বাংলার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিই হচ্ছে না পড়ুয়ারা, চিন্তায় শিক্ষা মহল
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যে জবাবে জুনিয়র চিকিৎসকরা জানান ‘‘আমরা নবান্নের দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমাদের বোনের সঙ্গে যে জঘন্য ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তার বিচার চাইতে। এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, তার নিশ্চয়তা আনতে। এবং যাঁরা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন, তাঁদের শাস্তি চেয়েছিলাম। আজ মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের উপর ভরসা রেখেই আমরা গিয়েছিলাম। গত ৩৩ দিন ধরে আমরা রাস্তায়। দরকারে আরও ৩৩ দিন রাস্তায় পড়ে থাকব। কিন্তু বিচার আমাদের চাই। আমরা চেয়ার চাই না।’’