বাঘের সঙ্গে লড়াই! সুন্দরবনে ৮৭ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে খাঁচাবন্দি করার পুরস্কার পেলেন প্রৌঢ়

Published on:

Sundarbans

ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের কথা উঠলেই সবার প্রথমে যেই এলাকার কথা মাথায় আসে, সেটি হল সুন্দরবন। কিন্তু সেই এলাকায় চোরাশিকারি, বনদস্যুদের দাপট, অভয়ারণ্যে অবাধ যাতায়াত, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে গত কয়েক দশকে ব্যাপক হারে কমেছিল সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা। সংকটে পড়েছিল সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে আবার বাঘের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।

প্রতি চার বছর অন্তর বাঘসুমারি হয়। গত মঙ্গলবারই বিধানসভায় রাজ্যে বাঘের সংখ্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরেছিলেন মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। তিনি বলেন, ‘২০১০-এ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ছিল ৭৪ টি। ২০১৪-এ এই সংখ্যা ছিল ৭৬। ২০১৮ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৮৮। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা ১০১।’ তাতে বেজায় খুশি বন্যপ্রেমীরা। এই খবরে সুন্দরবনেও বেশ খুশির হাওয়া বইছে। আর এর মাঝেই একজন ব্যক্তি তাঁর ৬০ বছরের কর্মজীবনে নিজের জীবনকে বাজি রেখে মোট ৮৭টি ভয়ঙ্কর বাঘকে খাঁচাবন্দি করেছেন। যা শুনে হতবাক সকলে।

WhatsApp Community Join Now

চোরা শিকারিদের হাত থেকে উদ্ধার অবলা প্রাণীদের

জানা যায়, সুন্দরবনের যে কোনও গ্রামে বাঘ ঢুকে পড়লেই ডাক পড়ত কুলতলির দক্ষিণ দুর্গাপুরের বাসিন্দা আমিরচাঁদের। তাঁর কাজই ছিল বাঘ ধরা। এবং সুস্থ অবস্থায় বাঘকে খাঁচাবন্দি করা। বহু বছর ধরে এই কাজ করে আশায় সেই কারণে বনদপ্তরের কর্মীরা তাঁকে শ্রদ্ধা করে ছোটবাবু বলেন। শুধু কি বাঘ! চোরাশিকারীরা হরিণ মেরে যখন চামড়া বিক্রি করত। তখন তাঁদের ধরে ১৭টি দুমূল্য মৃগচর্ম উদ্ধার করেছিলেন তিনি। আমিরচাঁদের পরিবারে আছেন তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। প্রথম ১৯৮৪ সালে ধনচি ক্যাম্পে অস্থায়ী বনকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তারপর তিন বছর পর সরকারিভাবে প্রথম বোটম্যান হিসেবে কুলতলি বিটে যোগ দেন।

গ্রামবাসীদের রক্ষায় ছুটে গিয়েছিলেন তিনি

তাঁর সাহসিকতার কথা গোটা সুন্দরবন এলাকার বাসিন্দারা জানে। একবার জলদস্যুদের কবল থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করার জন্য প্রাক্তন বনমন্ত্রী যোগেশ বর্মন তাঁকে পুরস্কৃত করেছিলেন। অন্যদিকে বাঘ ধরা নিয়ে আমিরচাঁদের নানা অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘ কয়েক বছর আগে চুপড়িঝাড়া এলাকা সাতদিন ধরে বাঘের আতঙ্কে থমথম করছিল। খাঁচা পেতেও সেটিকে ধরা যাচ্ছিল না। বাঘটিকে অনেক চেষ্টার পর ধরে ফেলি আমি। মৈপীঠে ছ’দিন পর বাঘ ধরা পড়েছিল। পরিস্থিতির চাপে নেটের মধ্যে ঢুকতে হয়েছিল আমাদের। বাঘ এক লাফ দিয়ে নেটে ঝাঁপাল। ভয় না পেয়ে সেই বাঘকেও কাবু করেছিলাম এবং অবশেষে খাঁচা বন্দি করা হয়েছিল।’

তবে সদ্য কাজ থেকে অবসর নেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন আমির। গত সোমবার আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবসে তাঁকে মঞ্চে তুলে সম্মান জানাল বনদপ্তর। চাকরির মেয়াদ বাড়ানো চিন্তাভাবনাও চলছে। গত সোমবার মৈপীঠের বৈকুণ্ঠপুর হাই স্কুলে এক অনুষ্ঠানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগীয় আধিকারিক নিশা গোস্বামী সম্মানিত করেন অন্য বন কর্মীদেরও।

বাছাই করা গুরুত্বপুর্ন খবর পেতে গ্রুপে যুক্ত হোন