প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: শুধুই ২০২৪ নয়, ২০২১ সাল থেকেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের কথা তুলে ধরেছিল সিনিয়র চিকিৎসক থেকে শুরু করে জুনিয়র চিকিৎসকরা। আর্থিক দুর্নীতি, হাসপাতালের নানা যন্ত্রাংশ, টাকা দিয়ে পড়ুয়াদের প্রশ্নপত্র ফাঁস ইত্যাদি নানা ধরনের অভিযোগ উঠে এসেছে। এমনকি বিদেশেও নানা কর্মকাণ্ডের খবর উঠে এসেছে খবরের শিরোনামে। কিন্তু গত ৯ আগস্ট কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া ঘটনা একেবারে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।
তিলোত্তমা কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের তৎপরতায় প্রথমেই CCTV ফুটেজ এবং উদ্ধার হওয়া নানা তথ্যের ভিত্তিতে সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এরপরে হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের ভার CBI এর কাছে চলে যাওয়ায় ঘটনার ১ মাসের মাথায় গ্রেফতার হয় সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। তবে এখানেই শেষ নয়। একের পর এক নয়া তথ্যের সন্ধান এখনও পেয়ে চলেছে CBI।
আর এদিকে মৃতা চিকিৎসকের সুবিচারের লড়াইয়ে জুনিয়র চিকিৎসকেরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। ৫ দফা দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একের পর এক বৈঠক বাতিল করার পর অবশেষে গত সোমবার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে করা হয় বৈঠক। সেই বৈঠকের ফলে ইতিমধ্যেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার হিসেবে বিনীত গোয়েল এর পরিবর্তে নিয়ে আসা হয় মনোজ ভার্মাকে। তবে এখনো কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেনি চিকিৎসকরা। তাঁদের দাবি মুখ্যমন্ত্রী বাকি দফাগুলি কাজের মাধ্যমে সুনিশ্চিত না করলে তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করছেন না।
CBI কে আরও সময় দেবে সুপ্রিম কোর্ট
এদিকে গতকাল সুপ্রিম কোর্টে ছিল আরজি কর মামলার শুনানি। সেখানে CBI এর তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ‘ তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য হাতে এখনও সময় আছে। সিবিআইকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে আমাদের। ওরা ঘুমোচ্ছে না। সত্য উদঘাটনের জন্য ওদের সময় দিতে হবে।’ এদিকে CBI এর উপর পূর্ণ আস্থা রাখছেন নির্যাতিতার বাবা। তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের উপর আমাদের আস্থা আছে, ১০০% ভরসা আছে। একটা সুষ্ঠু সমাধানের ব্যবস্থা করবে।’
এছাড়াও তিনি বলেন, ‘আমি একটাই কথা বলব, যারা যারা এই ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন, যারা প্রমাণ লোপাটের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন, সবাইকে যেন তদন্তের আওতায় আনা হয় এবং সকলের জন্য যেন কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।’ পাশপাশি গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে যা হয়েছে, সেটাকে তাঁরা আংশিক জয় হিসেবে দেখছেন কিনা জানতে চাওয়ায় নির্যাতিতার বাবার স্পষ্ট জবাব, ‘জয় আমাদের সেদিনই হবে, যেদিন আসল অপরাধীদের ধরা হবে এবং বিচার হবে। সে দিনই আসল জয় হবে।’
কী বলছেন নির্যাতিতার মা?
সেইসঙ্গে নির্যাতিতার মা বলেন, ‘২০২১ সালে যখন এই সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছিল, তখন যদি মুখ্যমন্ত্রী এই পদক্ষেপগুলো নিতেন, তাহলে আমার কোল খালি হতো না। আমার মেয়েটা হারিয়ে যেত না।’ কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এবং আরও বলেন, ‘ আমাদের মেয়েটা যদি ফিরে আসত, সেটাই আমাদের কাছে খুশির বিষয় হত। তাছাড়া আরও কোনও বিষয়ে আমাদের খুশি বা আনন্দের ব্যাপারই নেই।’