ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের জেরে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা দেশ। দফায় দফায় ছাত্রছাত্রী সহ আইনজীবী, চিকিৎসক, টলিপাড়া, প্রাইভেট সেক্টর সব জায়গায় আন্দোলন এবং মিছিল হয়েই চলেছে। প্রতিবাদের আগুন যেন দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী CBI চুলচেরা বিশ্লেষণ করে চলেছে আরজি কর ঘটনার তদন্তে।
গত মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টে ছিল আরজি কর কাণ্ডের প্রথম শুনানি। সেদিন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে এই মামলা উঠেছিল। রাজ্য সরকার এবং রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন এবং তীব্র ধিক্কার জানিয়েছিলেন। শুধু তাই নয় এদিন তিনি মহিলাদের নিরাপদ কাজের পরিবেশের জন্য পারফেক্ট প্রোটোকল নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছিল রাজ্য সরকারের ওপর। আর সেইদিনই প্রধান বিচারপতি শুনানির পরে আজ অর্থাৎ ২২ আগস্ট মামলার দ্বিতীয় শুনানির নির্দেশ দিয়েছিল।
মামলার দ্বিতীয় শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে বিস্ফোরক দাবি CBI এর!
সূত্রের খবর, আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানির দ্বিতীয় দিন ছিল। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় ছাড়াও এই বেঞ্চের বাকি দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জেবি পাদ্রিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র। মামলার প্রথম দিনের শুনানিতেই CBI-এর কাছে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তিন দিনের মধ্যে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। সেই অনুযায়ী দ্বিতীয় দিনের শুনানির শুরুতেই CBI তদন্তের স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টকে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ সেই স্ট্যাটাস রিপোর্টটি পড়েন নীরবে। এরপর প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘অভিযুক্তর মেডিক্যাল রিপোর্ট কোথায়?’ সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের আইনজীবী পিল সিব্বাল জানান, ‘কেস ডায়েরির অংশ সেটা। সেখানেই আছে রিপোর্ট।’
এরপরই সলিসিটর জেনারেল সিবিআই-এর তরফ থেকে জানানো হয় ঘটনার পাঁচদিন পরে যখন ঘটনাস্থলে CBI পৌঁছোয় তখন ঘটনাস্থল এর সব কিছু বদল করে দেওয়া হয়। আর এই কথা শুনেই রাজ্যের আইনজীবী জানান, ঘটনাস্থলে কিছু বদল করা হয়নি। উল্টে সব কিছুর ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছ। তাতে সলিসিটর জেনারেল জানান যে মামলায় সবথেকে অবাক করে দেওয়ার মত বিষয় ছিল এই যে, মৃতদেহ দাহ করার পরে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে FIR করা হয়। তার আগেই নাকি মৃত চিকিৎসকের সহকর্মী এবং সিনিয়ররা গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফির দাবি জানিয়েছিল। তার মানে তারা বুঝতে পেরেছিল যে নিশ্চয়ই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু গোপন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি সেই সময় আরজি করের প্রাক্তন সুপার আখতার আলি, প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ রায়ের বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো তুলে ধরে।
কী বললেন বিচারপতি পার্দিওয়ালা?
পাল্টা রাজ্য সরকার যখন মৃত চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের কথা উল্লেখ করে তখন বিচারপতি পার্দিওয়ালা বলেন, ‘এটা তো খুবই আশ্চর্যজনক যে ময়নাতদন্তের আগে UD রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেল!’ এবং আইনজীবী সিব্বলকে ভেবে চিন্তে মন্তব্য দেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর রাজ্য সরকারকে সরাসরি সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন করে যে, ‘ময়নাতদন্তের পরও কি পুলিশ জানত না যে এটা অস্বাভাবিক মৃত্যু? তাহলে কীভাবে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে FIR রুজু করা হয়?’
কিন্তু রাজ্য জানায়, অস্বাভাবিক মৃত্যুর ডায়েরি সকাল ১০টা ১০ মিনিটেই হয়েছিল। আর সেই কথা শুনে ফের সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন করে, ‘যদি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ডায়েরি সকাল ১০টা ১০ মিনিটে হয়ে থাকে, তাহলে ক্রাইম সিন রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে কেন সিল করা হল?’
রাজ্যকে তীব্র ভর্ৎসনা বিচারপতির
রাজ্য সরকারের এ হেন জঘন্য কর্মকাণ্ডে বিচারপতি পার্দিওয়ালা ক্ষুব্ধ হয়ে জানান যে রাজ্যে যে পদ্ধতি অনুসরণ করে মামলার তদন্ত চলছে তেমনটা তিনি তাঁর ৩০ বছরের কর্মজীবনে দেখেননি। পাশাপাশি তিনি নন-মেডিক্যাল সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট কে সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এবং তাঁর আচরণবিধি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।