ভোটের আগেই কি নবরূপে সাজতে চলেছে রাজ্যের ১২ টি চিড়িয়াখানা! গঠনগত দিক থেকে পুরোপুরি ভোল বদলে যাবে রাজ্যের মিনি জু থেকে পূর্ণাঙ্গ চিড়িয়াখানাগুলোর। প্রকাশ্যে এল সেই তথ্য। এইমুহুর্তে চিরিয়াখানাগুলোতে সিজন টাইম অফ আচ্ছে। যার দরুন চিড়িয়াখানা গুলোর গঠনগত দিক থেকে নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার অন্তর্গত সুরুলিয়া মিনি জু পরিদর্শন করতে এসেছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথরিটির সদস্যরা ।
টার্গেট ১২ টি চিড়িয়াখানা। আগে এই চিড়িয়াখানা গুলোর ক্ষেত্রে ১০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হতো। কিন্তু এবার একেবারে জোর কদমে ২০ বছরের নিরিখে নতুন ভাবে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে নবরূপে সাজানো হবে রাজ্যের মিনি জু থেকে পূর্ণাঙ্গ চিড়িয়াখানাগুলোকে। যা আগামী জুলাই থেকেই পর্যায়ক্রমে নতুন চেহারায় বদলাতে শুরু করবে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে সুরুলিয়া মিনি জু পরিদর্শন করতে এসেছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথরিটির সদস্যরা। সেই অথরিটির সদস্য সচিব সৌরভ চৌধুরী জানান ইতিমধ্যেই কলকাতার হরিণালয় ও শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারির মাস্টার প্ল্যানের অনুমোদন দিয়েছে সেন্ট্রাল জু অথরিটি। যার দরুন পর্যটকদের আকর্ষণ করতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই হরিণালয়ে বাঘ-বাঘিনী ও সিংহ-সিংহী আসতে চলেছে। অর্থাৎ পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে চলতি বছর পুজোর আগেই সকলেই দর্শন করতে যেতে পারবেন।
কী কী পশু আনা হচ্ছে জঙ্গলে?
জানা গিয়েছে জু তে নিয়ে আসা এই বাঘ-বাঘিনী আনা হচ্ছে বেঙ্গল সাফারি থেকে। পাশাপাশি ভিন রাজ্য থেকে আসছে সিংহ। আলিপুর থেকে আসবে সিংহী। অন্যদিকে সুরুলিয়া যেহেতু পূর্ণাঙ্গ চিড়িয়াখানার পরিণত হতে চলেছে তাই এখানে চিতা বাঘ, ম্যাকাও ছাড়াও নতুন করে একাধিক ভল্লুক, নেকড়ে ও একটি হায়না নিয়ে আসা হবে। এদিন সদস্য সচিব বৈঠক করেন অনেকের সঙ্গে। যাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞানসম্বন্ধীয় বিশেষজ্ঞরা ও ইঞ্জিনিয়াররা। এছাড়াও অথরিটির সদস্য সচিব সৌরভ চৌধুরী জানান, “জঙ্গলমহল পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামের ক্ষেত্রে আমাদের ‘থিম’ হল সেখানকার ল্যান্ডস্কেপে যে সকল বন্যপ্রাণ আছে তাদেরকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে এসে ডিস প্লে করা। পুরুলিয়ায় যেমন বাঘ রিপোর্ট হয়েছে। তেমনই লেপার্ড, নেকড়ে, হায়না তো আছেই। জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সমীক্ষায় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ শ্রেণীর এক নম্বরে থাকা মেড্রাস ট্রি শেরো দেখা গিয়েছে। যা একেবারে বিরল। ফলে সুরুলিয়ার চিড়িয়াখানাকে এই বনমহলের থিমেই তুলে ধরা হবে।”
গঠনগত দিক থেকে কী কী বদল আসতে চলেছে?
জানা গিয়েছে বন্যপ্রাণীদের খাঁচা গুলোকে একদম প্রাকৃতিক রুপে নির্মাণ করা হবে। সেখানে বন্যপ্রাণীরা যাতে খেলাধুলা করতে পারে, লুকিয়ে থাকতে পারে। পাশাপাশি এই খাঁচায় নানা গাছ লাগানো থাকবে। চিড়িয়াখানা গুলোতে যেখানে দাবদাহের সঙ্গে বন্যপ্রাণ লড়াই করতে পারে সেই পরিকাঠামোও তৈরি করা হবে। খাওয়া-দাওয়া, বাসস্থান যাতে একেবারে জঙ্গলের মধ্যেই প্রাকৃতিক হয় সেইদিকে নজর দিতে হবে। মাংস টুকরো টুকরো করে দেওয়া হবে না। তারা পরিশ্রম করে যাতে খেতে পারে সেই ব্যবস্থাই করতে হবে। যেমনটা জঙ্গলে নিজের মতো করে বন্যপ্রাণ ‘ডমিনেশন’ করে। থাকবে স্প্রিংলঙ্কার, ফ্লোয়িং ওয়াটার। এছাড়াও পৃথকভাবে থাকবে এ্যানিমেল ম্যানেজমেন্ট, মেন ম্যানেজমেন্ট, বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় ব্যবস্থা, জু আউটরিচ এডুকেশন, কালেকশন প্ল্যান, কনজারভেশন ব্রিডিং।
তবে শুধু সুরুলিয়া নয় একে একে মাস্টারপ্ল্যানে অন্তর্গত হচ্ছে দার্জিলিং, হাওড়ার গড়চুমুক, সুন্দরবন বন্যপ্রাণী পার্ক, ঝড়খালি ও কোচবিহার রসিকবিল মিনি চিড়িয়াখানা প্রভৃতি। এছাড়াও মালদার আদিনা ডিয়ার পার্ক নিয়েও পরিকল্পনা চলছে। তবে আলিপুরদুয়ারের দক্ষিণ খয়েরবাড়ি মিনি চিড়িয়াখানা, বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম ও সুরুলিয়া মাস্টার প্ল্যান তৈরি হয়ে আগামী মাসে সেন্ট্রাল জু অথরিটির কাছে জমা হয়ে যাবে। যা জুন মাসের মধ্যেই অনুমোদন করিয়ে নিতে পারবে বলে মনে করছে রাজ্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।