ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: আরজি কর হাসপাতালে দ্বিতীয় বর্ষের ওই তরুণী চিকিৎসক এর সঙ্গে ঘটে যাওয়া এ হেন মর্মান্তিক ঘটনায় রীতিমত মর্মাহত গোটা রাজ্য। তার জেরে কলকাতার রাজপথ উত্তাল হয়ে উঠেছে। সঙ্গে উঠেছে স্লোগান–উই ওয়ান্ট জাস্টিস। তবে শুধু এই রাজ্য নয়,পাশাপাশি গোটা দেশ এবং বিদেশেও এই ঘটনা নিয়ে নানা প্রতিবাদ মিছিল বেরিয়েছে। এদিকে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর দ্রুত দাহের ব্যবস্থা করা নিয়ে বারবার অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতার বাবা–মা। এবার সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ময়না তদন্ত সম্পর্কিত এক গোপন চিঠি ফাঁস হল।
ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে পুলিশের নির্দেশিকা লাগবে!
জানা গিয়েছে, গত ৯ আগস্ট তরুণী চিকিৎসকের দেহ হাসপাতাল থেকে উদ্ধারের পর ওই দিনই ময়নাতদন্ত সেরে ফেলতে চেয়েছিল প্রশাসন। আর সেই কাজ যাতে আরও দ্রুত হয় তাই আরজি করের সুপার একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেন। সেখানে নিয়োগ করা হয় ওই মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিনের প্রফেসর অপূর্ব বিশ্বাস, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রিনা দাস এবং নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মলি বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু যেহেতু সূর্য অস্ত চলে যাওয়ার পরে ময়নাতদন্ত করা যায় না, তাই বোর্ড গঠনের নির্দেশিকায় এক সদস্য নোট দিয়ে জানান, বিকেল ৪টের পরে ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে পুলিশের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা লাগবে। এবং ওই নোটের সঙ্গে ২০২১ সালে স্বাস্থ্য দফতরের একটি নির্দেশিকার মেমো নম্বরও তিনি উল্লেখ করেন।
আসলে ময়না তদন্তের নিয়ম অনুযায়ী দেখা গিয়েছে সূর্য অস্ত চলে যাওয়ার পরে ময়নাতদন্ত করা যায় না। কিন্তু আরজি করের সেই মৃত তরুণী চিকিৎসকের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম খাটলো না। কিন্তু সেই ময়না তদন্তের সময় আপত্তি জানিয়ে নোট দিয়েছিলেন ময়নাতদন্তের বোর্ডে থাকা একজন সদস্য। কিন্তু তা পরোয়া করেনি পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একপ্রকার তড়িঘড়ি করেই সেই মৃত চিকিৎসকের ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে এসেছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের SOP-তে কী বলা রয়েছে?
সূত্রের খবর, ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের SOP-তে বলা হয়েছিল যে, আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা ছাড়া খুন, আত্মহত্যা, ধর্ষণ, রহস্যজনক মৃত্যু এবং উদ্ধার হওয়া পচাগলা দেহর ক্ষেত্রে রাতে ময়নাতদন্ত একদমই করা যাবে না। কিন্তু এসবের পরেও ময়নাতদন্ত হয়। গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার ওই নোট আরজি করের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসককে টালা থানার তরফে দেওয়া চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল স্পষ্ট দাবি করেন, বিশেষ কারণে বিকেল চারটের পরে তরুণী চিকিৎসকের দেহের ময়নাতদন্ত করতে হবে। আর এই ভিত্তিতে এখন নানা রকমের প্রশ্ন উঠছে চিকিৎসামহল সহ সাধারণ মানুষের মনে।
প্রশ্ন উঠছে মাত্র তিন মাস আগে আরএমও থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হওয়া এক চিকিৎসককে কী ভাবে বোর্ডে রাখা হল? পাশাপাশি যেখানে ২০২১ সালের রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের SOP তে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে বিকেল চারটের পর ময়না তদন্ত না করার নির্দেশ দেওয়া ছিল, সেখানে কীভাবে কেন ময়না তদন্ত করা হল? এছাড়াও আরজি করের ময়নাতদন্তের বোর্ডে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র ঘনিষ্ঠদের থাকার বিষয়টিও বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে।