সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: দীর্ঘ জটিলতা কাটিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে অবশেষে শেষ হল স্কুল সার্ভিস কমিশনের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার (SSC Issue) মামলা মোকদ্দমা। হ্যাঁ, বুধবার দুপুরে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, এসএসসি’র নতুন বিজ্ঞপ্তিতে কোনোরকম হস্তক্ষেপ করা যাবে না। অর্থাৎ, হাইকোর্টের সামনে থাকা সবকটি মামলা আপাতত খারিজ হল। আর তারই সঙ্গে 26 হাজার শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের আইনি বাধা পুরোপুরি কেটে গেল।
কী ছিল এই মামলার মূল বিষয়?
প্রসঙ্গত বলে রাখি, 2016 সালে এসএসসি’তে নিয়োগের দুর্নীতি লক্ষ্য করে সুপ্রিম কোর্ট 26 হাজার চাকরি বাতিল করে দিয়েছিল। পরে সেই চাকরিহারাদের জন্য আবার নতুন করে পরীক্ষার কথা জানায় এসএসসি এবং নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সেই বিজ্ঞপ্তি নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, যোগ্যতার মান বদল, নম্বর বণ্টনে পরিবর্তন, বয়সসীমা নির্ধারণ, সব কিছুই 2016 সালের নিয়ম মেনে করা হচ্ছে। আর এই সমস্ত পরিবর্তনকে চ্যালেঞ্জ করেই একাধিক মামলা করা হয় হাইকোর্টে।
আদালত কি বলল?
বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি সুমিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এসএসসি কীভাবে নিয়োগ করবে, সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। সে অধিকার কমিশনেরই, আদালত হস্তক্ষেপ করার কেউ নয়। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেছেন, 2019 সালের পর নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তৈরি করা হয়েছে। তবে সে সময় কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। তাই নতুন নিয়ম মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে হবে।
তবে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রায় ঘোষণার পর বলেছেন যে, এটি রাজ্যের জন্য বড় জয়। আদালত স্পষ্টভাবে রাজ্যের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কোনোরকম অযৌক্তিক দাবিকে পশ্রয় দেয়নি। তিনি আরো জানান, সুপ্রিম কোর্ট কোথাও বলেনি যে, 2016 সালের পুরনো নিয়ম মেনে নিয়োগ করতে হবে। কমিশন যেমনটা মনে করেছে, ঠিক তেমনটাই করেছে।
নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কী কী বদলে আনা হয়েছে?
প্রথমত, এবার নয়া নিয়মে লিখিত পরীক্ষায় 55 থেকে 60 নম্বর করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাগত যোগ্যতার উপর 35-র বদলে এবার 10 নম্বর দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয়ত, 10 নম্বরের ইন্টারভিউ রাখা হচ্ছে। চতুর্থত, শিক্ষগত অভিজ্ঞতা এবং লেকচার ডেমোর উপর সর্বোচ্চ 10 নম্বর দেওয়া হচ্ছে এবং বয়স সীমা 1 জানুয়ারি, 2025 অনুযায়ী সর্বোচ্চ 40 বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসএসসি স্পষ্ট জানিয়েছে, এই পরিবর্তনের মূল কারণ হল যোগ্যতার মান নির্ধারণ করা এবং অভিজ্ঞতার গুরুত্ব দেওয়া। আর এই যুক্তিকেই এবার আদালত সমর্থন জানিয়ে সমস্ত দাবি-দাওয়া খারিজ করল। প্রসঙ্গত চাকরিহারা প্রার্থীদের পক্ষে আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তা লংঘন করে নতুন নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। এটি কমিশনারের ইচ্ছাকৃত ভুল। কিন্তু আদালত সেই রায়ের সমস্ত যুক্তি খারিজ করে দিয়ে জানায়, নিয়োগ সম্পর্কে যাবতীয় মূল্যায়ন কমিশনেরই অধিকার, কমিশন যা করবে সেটা মেনে নিতে হবে।