TMCP-র প্রতিষ্ঠা দিবসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা! দিন বদলের জন্য চিঠি শিক্ষা দফতরের

Calcutta University

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: আগামী ২৮ আগস্ট, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন পরীক্ষা রাখা হয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। যার জেরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়ে এক নয়া বিতর্ক। এদিকে ওইদিন কোনও সরকারি ছুটি না থাকায় পরীক্ষার দিনক্ষণ পরিবর্তন করতে নারাজ উপাচার্য শান্তা দত্ত দে। কিন্তু এবার এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করল উচ্চ শিক্ষা দফতর। দিন বদল চেয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিল তারা। বিতর্কিত প্রশ্ন উঠে আসছে শিক্ষাবিদদের তরফ থেকে।

TMCP প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনই পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ে

আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী ২৮ আগস্ট TMCP-র প্রতিষ্ঠা দিবস। এদিকে ওই একই দিনে দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগ (B.Com) এবং আইন বিভাগ (Ba LLB)-র চতুর্থ সেমেস্টারের পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর তাই নিয়ে শুরু হয়ে গেল একাধিক বিতর্ক। TMCP দাবি করেছে যে, দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনে পরীক্ষা রাখাটা “ষড়যন্ত্র”, এবং ছাত্রছাত্রীদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্বের চেষ্টা। সেই কারণে কলকাতা সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল এবং সভার জন্য, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কলেজে পৌঁছতে অসুবিধা হবে বলে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ এই মর্মে বেশ কিছু চিঠি দিয়েছেন। তাঁদের আর্জি পড়ুয়াদের অসুবিধার কথা ভেবে যদি পরীক্ষার দিন বদল করা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি উচ্চ শিক্ষা দফতরের

এদিকে দলীয় কর্মসূচির দিনে কেন পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য এটিকে একটি ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। রীতিমত এই ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও পরীক্ষার দিনক্ষণ পরিবর্তন করতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমতাবস্থায় তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে ছুটি দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করছে উচ্চ শিক্ষা দফতর। পরীক্ষার দিন বদল করতে বলে এবার চিঠি দিল উচ্চ শিক্ষা দফতর। ইতিমধ্যেই উপাচার্য শান্তা দত্তের কাছে চিঠি পৌঁছেছে উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে।

ক্ষুব্ধ বিদ্যালয়ের উপাচার্য

শিক্ষা দফতরের পাঠানো চিঠিতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ছাত্রদের তরফ থেকে বহু আবেদন এসেছে। সেদিন তাঁরা পরীক্ষা দিতে চান না। তাই দিন বদলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সরকারের পরীক্ষার বিষয়ে নাকগলানো নিয়ে ক্ষুব্ধ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত দে এদিন বলেন,” শিব ঠাকুরের আপন দেশে, নিয়ম কানুন সর্বনেশে। পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বোর্ড অফ স্টাডিজ’। প্রায় তিন মাস আগে সেই বোর্ডের বৈঠকে এই নির্দিষ্ট সূচি চূড়ান্ত হয়, এবং তা অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার মেনেই তৈরি। যদি এক রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা দিবসকে মেনে পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়, তাহলে সমস্ত দলের (ছাত্র) সংগঠনের দিনগুলিও মানতে হবে। সেক্ষেত্রে কি পরীক্ষার শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব?”

কী বলছেন শান্তা দত্ত দে?

শিক্ষা দফতরের তরফে পরীক্ষার দিন বদল সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার পর শান্তা দত্ত দে আরও বলেন যে, “TMCP যেমন তাদের প্রতিষ্ঠা দিবসকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে, তেমনই SFI, ABVP বা অন্য ছাত্র সংগঠনরাও সেটা দাবি করতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিকে মান্যতা দিতে পারে না। কারণ সরকারি ছুটির দিন যাতে পরীক্ষার সঙ্গে না মেলে, সেটা খেয়াল রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক কোনও দলের অনুষ্ঠানের কারণে পরীক্ষার সূচি বদলানোর প্রশ্নই নেই।” তাঁর স্পষ্ট কথা, তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট নন। তাই তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম বা এসইউসিআই— সব ছাত্র সংগঠনের প্রতিই তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এক।

সিন্ডিকেট বৈঠক সোমবার!

এদিকে চিঠি হাতে পাওয়ার পর, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে আপৎকালীন সিন্ডিকেট বৈঠক ডাকা হয়েছে। আগামী সোমবার অর্থাৎ ৪ আগস্ট, এই বৈঠক হবে। বৈঠকে এই চিঠি নিয়ে আলোচনা করা হবে। তারপরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদরা। পরীক্ষার দিন বদলের কথা উচ্চ শিক্ষা দফতর বলতেই পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে যথাযথ কারণটা কী দাঁড়াচ্ছে? একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের কারণে পরীক্ষার দিন বদলের কথা বলা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। এছাড়াও প্রশ্ন উঠছে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা ভবিষ্যৎ নিয়ে।

আরও পড়ুন: কোচবিহার থেকে হাজারদুয়ারি, বাংলার ২৮ ASI স্থানে বেআইনি দখলদারি! জানাল কেন্দ্র

TMCP-র এই কর্মকাণ্ড নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। এদিন বিজেপি মুখপাত্র জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দলটা তৈরি হয়েছে ১৯৯৮ সালে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ তারপর তৈরি হয়েছে। ২৮ অগস্ট কোনওভাবেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস নয়। ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস, ওটা তৃণমূল চুরি করেছে। কিন্তু তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বদলে যাবে, এটা কি ভূ-ভারতে কোথাও হয়েছে?”

Leave a Comment