আর যেতে হবে না বাজারে, বাড়িতেই করতে পারবেন আলু চাষ! রইল সঠিক পদ্ধতি

Potato Farming At Home see the whole process before try

বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: বাজার থেকে নানান সবজি কিনে এনে প্রতিদিনই তো খাওয়া হয়! তবে এর বদলে যদি নিজে চাষ করে একেবারে হাতে তৈরি শাকসবজি খাওয়া যায়, তাহলে কেমন হয়? উত্তরটা যে “মন্দ হয় না”-ই আসবে সেটা স্বাভাবিক। “কিন্তু এখন নাঙ্গল নিয়ে জমি চাষ করতে নামব নাকি?” যদি এমনটা ভেবে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভুল ভাবছেন। বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গা থাকলেই করতে পারেন বিভিন্ন সবজির চাষ। তবে যদি সেটাও না থাকে, তাহলেও রয়েছে উপায়। একেবারে বাড়িতেই বলা ভাল বাড়ির ছাদে টবে বা গামলায় চাষ করা যাবে সবজি। আর সেটা যদি আলু চাষ (Potato Farming At Home) হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। হ্যাঁ, এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁরা বাড়ির ছাদে টবে কিংবা ছোট গামলাতেই দেদার আলু ফলাচ্ছেন। আপনিও চেষ্টা করে দেখবেন নাকি? চট করে শিখে নিন পদ্ধতি।

প্রথম ধাপ

নিজের বাড়ির ছাদে টবে বা ছোট গামলায় আলু ফলাতে চাইলে প্রথমেই একটি 20 থেকে 25 ইঞ্চির টব বা মাঝারি গামলা বেছে নিন। মনে রাখতে হবে, আলু চাষের ক্ষেত্রে জল যেমন অন্যতম রসদ তেমনই ওই জল গোড়ায় জমে গেলে তা চাষের জন্য প্রচন্ড ক্ষতিকর। তাই প্রথমেই টবে বা গামলার নিচের অংশ ফুটো করে নিতে হবে অর্থাৎ জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এরপর প্রথম ধাপে নুড়ি পাথর এবং পরের ধাপে সাদা বালি দিয়ে নিচের স্তর সাজাতে হবে। এর ফলে টব বা গামলায় থাকা অতিরিক্ত জল সোজা নিচে চলে আসবে। ফলে চাষে ক্ষতি হবে না।

দ্বিতীয় ধাপ

দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন করতে হবে মাটি। কৃষি বিজ্ঞান বলে, আলু চাষের উপযোগী দোআঁশ মাটি। তবে শুধু মাটিতেই হবে না। দোআঁশের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে জৈব সার (গোবর সার)। সঙ্গে মেশাতে হবে 10 শতাংশ সাদা বালি (প্রথম ধাপে বালি দিয়ে না থাকলে)। এছাড়াও বাড়িতে সর্ষের খোল থাকলে গুঁড়ো করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন। পাশাপাশি আলু চাষের টব এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে নিয়মিত আলো বাতাস খেলে। সেই সাথে মাটি যাতে শক্ত এবং আলগা থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

তৃতীয় ধাপ

তৃতীয় ধাপে আলুর বীজ বের করে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে বাজার থেকে চাইলে অঙ্কুরিত আলু কিনে নিয়ে আসতে পারেন অথবা বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে রেখে দেওয়া আলু থাকলে সেগুলি থেকে এমনই অঙ্কুর বের হয়। মনে রাখতে হবে, ভাল জাতের আলু যেমন চন্দ্রমুখি বা জ্যোতি বেছে নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে আলু ছোট হলে গোটা, বড় হলে মাঝখান থেকে ভাগ করে অঙ্কুরিত অংশটি উপরের দিকে রেখে মাটির 1 থেকে 2 ইঞ্চি গভীরে পুঁতে দিতে হবে। বলা বাহুল্য, অঙ্কুরিত আলুর পুরো অংশটি নিচে থাকছে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আর হ্যাঁ, প্রতিটি অঙ্কুরিত আলু ফাঁকা ফাঁকা বসাতে হবে।

চতুর্থ ধাপ

অঙ্কুরিত আলুগুলি টব বা গামলার মাটিতে বসানোর পর চতুর্থ ধাপে কোনও ঝাঁঝরি বা পাত্রের মাধ্যমে ধীরে ধীরে জল দিয়ে মাটি ভেজাতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রথমবারে কিছুটা বেশি জল দেওয়ার পর পরিমাণ মতো অল্প অল্প করে জল দিতে হবে। জল বেশি পরিমাণে দিয়ে দিলে আলুর গোড়া পচে যেতে পারে।

পঞ্চম এবং শেষ ধাপ

চতুর্থ ধাপে মাটিতে জল দেওয়ার কাজ শেষ হয়ে গেলে আলু চাষের টব বা গামলাগুলিকে অন্তত 6 ঘন্টা একটানা রোদে রাখতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, আলু চাষের অন্যতম প্রধান উপাদান পর্যাপ্ত সূর্যালোক। আর সেটা হলেই তরতরিয়ে বাড়বে আলু গাছ। প্রথম দিন 6 ঘন্টা পর্যাপ্ত রোদ খাওয়ানোর পর পরিমাণ মতো জল এবং একইভাবে সূর্যালোক অর্থাৎ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মধ্যে টানা 30 দিন থাকলে আলুর গাছ বেড়ে উঠতে শুরু করবে। অভিজ্ঞ চাষীদের মতে, ঠিকঠাক ভাবে বাড়ির ছাদে আলু গাছের পরিচর্যা করলে 90 দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যেতে পারে।

অবশ্যই পড়ুন: KKR-র হাতে সবথেকে বেশি, কম মুম্বইয়ের! IPL 2026-এ কোন দলের হাতে কত টাকা?

উল্লেখ্য, আলু চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময় বছরের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের সময়টা। কাজেই আজকের দিনে বাড়ির ছাদে আলু চাষ করার কথা ভেবে থাকলে প্রতিবেদনটি থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নেওয়ার পাশাপাশি কয়েকজন অভিজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আজই আলু চাষ শুরু করে দিতে পারেন।

Leave a Comment