সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: কখন কার ভাগ্য খুলে যায় কেউ বলতে পারে না। তেমনই আজ এমন একজনের জীবনকাহিনী শোনাব, যা শুনলে চমকে উঠবেন আপনিও। হ্যাঁ, ইনিই ভারতের সবথেকে ধনী নাপিত (Richest Barber), যার গ্যারেজে ৪০০টির বেশি গাড়ি রয়েছে, অথচ তিনি একসময় খবরের কাগজ বিতরণ করতেন, এমনকি ঘরে ঘরে দুধ বিক্রি করতেন। নিয়মিত সংসার চালানোর খরচটুকু জোগাড় করতে পারতেন না। আর আজ তার কাছে সবই আছে। জানতে আগ্রহী হলে অবশ্যই প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ভারতের সবথেকে ধনী নাপিত
আসলে রমেশ বাবু নামে খ্যাত বেঙ্গালুরুর এই বাসিন্দা বর্তমানে ভারতের সবথেকে ধনী নাপিত। আর আজ তিনি কোটিপতি এবং ৪০০টি গাড়ির মালিক। এমনকি রোলস রয়েস, বিএমডব্লিউ এবং জাগুয়ার সহ তাঁর ১২০টি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। তবে কোটিপতি হওয়ার পরেও তিনি সেই সেলুনে কাজ করা বন্ধ করেননি। এখনও পর্যন্ত তিনি রোজ মানুষের চুল কাটেন।
চরম দারিদ্রতার মধ্য দিয়েই কেটেছে সংসার
বর্তমানে তাঁর কাছে হয়তো সবকিছুই আছে। আজ বিলাসবহুল জীবনযাপন করলেও তাঁর শৈশব কেটেছিল চরম দারিদ্রতাকে সাক্ষী নিয়ে। বেঙ্গালুরুর এক দরিদ্র পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বয়স যখন মাত্র ৮ বছর, তখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময়ই তাঁর বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের অর্থ উপার্জনের আর কেউ থাকে না। এরপর তাদের তিন সন্তানের ভরণপোষণের জন্য রমেশের মা গৃহকর্মী হিসেবেই কাজ শুরু করেন। তবে এমন বহু দিন গিয়েছে, যেখানে মাত্র এক বেলার খবর জুটেছে তাঁদের।
কারণ, তাঁর মা কঠোর পরিশ্রম করেও সংসার খরচ জোগাড় করতে পারতেন না। তবে রমেশ বাবু বড় হওয়ার সাথে সাথেই ঘরের দায়িত্ব পালন করা শুরু করেছিলেন। তিনি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ঘরে ঘরে দুধ বিলি করতেন। এমনকি রাস্তায় খবরে কাগজ বিক্রি করতেন। তবে এত কিছুর পরেও তিনি পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন এবং এসএসসি পাস করেছিলেন। এরপর তিনি এক কলেজেও ভর্তি হন।
পড়াশোনার মধ্যেই চালাতেন সেলুন
তাঁর ভাগ্যের মোড় খুলে যায় এক সেলুনকে কেন্দ্র করে। কারণ, রমেশের বাবা ব্রিগেড রোডে একটি ছোট সেলুন রেখে গিয়েছিলেন, যেটি তাঁর কাকা চালাতেন। এমনকি তিনি প্রতিদিন ৫ টাকা করে বাড়িতে পাঠাতেন। তবে কয়েক বছর পর রমেশের কাকা সেই ৫ টাকা দেওয়াও বন্ধ করে দেন। আর এতেই তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়। মাত্র ১৪ বছর বয়সে রমেশ তাঁর কাকার কাছ থেকে সেলুনটি ফিরিয়ে নেয়, আর সেটিকে নতুন করে আবারও তৈরি করে। পাশাপাশি দুজন কারিগর নিয়োগ করেন। তবে সমস্যা ছিল একটাই, কারিগররা সময়মতো কাজে আসত না। এতে তাঁর ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছিল। আর রমেশ নিজেও চুল কাটতে জানতো না। তবে একদিন একজন রমেশ বাবুর কাছেই চুল কাটার জন্য জোর করে। আর সেখান থেকেই তিনি চুল কাটার সাহস পান ও পরিশ্রমের সাথে কাজ শুরু করেন।
সে সময় রমেশ সকাল ছয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সেলুনের কাজ করতো। এমনকি তাঁর মধ্যেই কলেজ সামলাত। কোনও অভিযোগ বা বাধা ছাড়াই সে প্রতিদিন প্রায় ১৬ ঘন্টা করে পরিশ্রম করত। ধীরে ধীরে তাঁর চুল কাটা বিখ্যাত হয়ে ওঠে। আর এতেই তাঁর ব্যবসা বড় হতে থাকে এবং সেলুনের আয় থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করেন তিনি। এরপর ১৯৯৩ সালে তিনি কিস্তিতে একটি মারুতি গাড়ি কিনেছিলেন। তবে কিছুদিন পর আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে সেই কিস্তি আর শোধ করতে পারেননি তিনি। আর রমেশের মা যে বাড়িতে কাজ করত, সেই বাড়ির মালিক রমেশকে গাড়ি ভাড়া করার পরামর্শ দেন। তবে এই পরামর্শ যেন তাঁর কাছে আশীর্বাদ হিসেবে প্রমাণিত হয়। যখন তিনি গাড়ি ভাড়া করেন, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে, বেঙ্গালুরুতে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান, এখান থেকে শুরু হল ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ!
কিছুদিন নিজে গাড়ি চালানোর পর রমেশবাবু সিদ্ধান্ত নেন যে, আরও বড় কিছু করতে হবে। তারপর তিনি গাড়ি ভাড়ার ব্যবসাতেই পুরো ঢুকে গেলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, বেঙ্গালুরুতে এই ব্যবসার প্রচুর চাহিদা। তাই ভিন্ন কিছু করতে হবে। ধীরে ধীরে তিনি এরপর নিজের মালিকানাধীন গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি করেন। ব্যবসাটি সমৃদ্ধ হতে শুরু করার সাথে সাথে তিনি বিলাসবহুল সব গাড়ি কিনতে শুরু করেন। আর এখন তার গ্যারেজে ৪০০টির বেশি গাড়ি রয়েছে। এমনকি ১২০টি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। তবে তাঁর কাছে এত কিছু থাকা সত্ত্বেও তিনি আজও সেলুনে চুল কাটেন। চুলকাটা বন্ধ করেননি।