সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ছোট্ট একটি পোকা বদলে দিতে পারে আপনার ভাগ্য! হ্যাঁ, শুনতে আজগুবি মনে হলেও এক্কেবারে সত্যি। কারণ পৃথিবীর সবথেকে দামি পতঙ্গ এটিই। জানা গিয়েছে, এর নাম স্ট্যাগ বিটল (Stag Beetle)। কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়, বরং সংগ্রাহকদের কাছেও এটি বিরাট মূল্যবান।
তবে আপনি যদি ভেবে থাকেন, এই পোকার দাম কতই বা হতে পারে, তাহলে আমরা আপনাকে জানিয়ে রাখি, এই বিরল প্রজাতির স্ট্যাগ বিটলের দাম 75 লক্ষ টাকা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। মানে একটি পোকা বিক্রি করেই আপনি কিনে ফেলতে পারেন বিলাসবহুল Toyota Fortuner!
স্ট্যাগ বিটল আসলে কী?
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এটি এমন একটি শক্তিশালী পোকা, যার পুরুষদের বড় শিংয়ের মতো চোয়াল থাকে। আর এই চোয়ালের জন্যই এর নামকরণ করা হয়েছে স্ট্যাগ, অর্থাৎ হরিণের মতো। আর এরা মূলত ইউরোপ, এশিয়া বা আমেরিকার গ্রীষ্মকালীন অরণ্যে দেখা যায়। ভারতে এদের পাওয়া যায় মূলত অসম, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশের মতো জায়গায়।
জানা যাচ্ছে, একটি পুরুষ স্ট্যাগ বিটলের দৈর্ঘ্য হয় প্রায় 35 থেকে 75 মিলিমিটার পর্যন্ত। আর এর ওজন মোটামুটি 2 থেকে 6 গ্রামের মধ্যেই। কিন্তু ওজন কম হলেও এর মূল্য সত্যিই আকাশছোঁয়া! কারণ জানলে চমকে উঠবেন।
কেন এত দামি এই পোকা?
প্রথমত, বহু প্রজাতির স্ট্যাগ বিটল আজ বিলুপ্তির পথে। বন ধ্বংস, বাসস্থান ধ্বংস এদের সংখ্যা দিনের পর দিন কমিয়ে আনছে। আর লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম বলছে, উত্তর ইউরোপে এই পতঙ্গ একেবারে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় পড়ে গিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, জাপানে এই পোকাকে পোষ্য হিসেবে রেখে দেওয়া হয়। প্রায় 3 লক্ষেরও বেশি মানুষ এই পতঙ্গ সংগ্রহ করে রাখেন এবং সেখানে স্ট্যাগ বিটলের লড়াইয়ের প্রতিযোগিতাও হয়। জানা যাচ্ছে, 1999 সালে টোকিওতে 80 মিলিমিটার লম্বা একটি স্ট্যাগ বিটল প্রায় 90 হাজার ডলারে বিক্রি হয়, যা ভারতীয় মুদ্রায় দাঁড়াচ্ছে প্রায় 75 লক্ষ টাকা।
তৃতীয়ত, জাপানসহ এশিয়ার কিছু কিছু দেশে স্ট্যাগ বিটলকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবেই ধরা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এই পোকা বাড়িতে রাখলে আর্থিকভাবে ধনী হওয়া যায় এবং সমস্ত কুপ্রভাব কেটে যায়। আর ইউরোপের প্রাচীন কাহিনীতে এই পোকার আধ্যাত্মিক কাহিনী ছড়িয়ে রয়েছে।
চতুর্থত, কিছু আদিবাসী সংস্কৃতিতে এই স্ট্যাগ বিটল বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক বা ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। যদিও এটিকে বৈজ্ঞানিকভাবে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলেই উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই দাবির এখনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
পঞ্চমত, স্ট্যাগ বিটলের ডিম ফুটে পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গ হতেই প্রায় দুই থেকে পাঁচ বছর সময় লেগে যায়। অথচ পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় এরা মাত্র কয়েক মাস বাঁচে। ফলে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এদের চাষ সত্যিই ব্যয়বহুল। আর সে কারণেই এই পোকার চাহিদা আকাশছোঁয়া।
আরও পড়ুনঃ মাসে মিলবে ৪৫,০০০! ইন্টার্নশিপের সেরা সুযোগ দিচ্ছে BYJU’S
প্রকৃতির বন্ধু এই পোকা
জানিয়ে রাখি, স্ট্যাগ বিটল জীবন্ত গাছ খায় না, বরং পচা কাঠ খেয়ে বেঁচে থাকে। ফলে এরা পরিবেশের কোনোরকম ক্ষতি করে না এবং অরণ্যের পুষ্টি চক্রে সাহায্য করে। তাই ইউকে সহ বিভিন্ন দেশে এদের বিক্রি করা হয় আইনভাবেই। তবে ভারতে বেআইনি বেচাকেনা হলেও কালোবাজারে এই পতঙ্গের চাহিদা সবথেকে বেশি।
প্রসঙ্গত বলে রাখি, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং হিমালয়ের পাদদেশে এখনো কিছু বিরল প্রজাতির স্ট্যাগ বিটল লক্ষ্য করা যায়। যদিও জাপানের মতো দেশে এখনো সেরকম এই পতঙ্গের তেমন আনাগোনা নেই, তবুও আন্তর্জাতিক কালোবাজারে এদের অবৈধ পাচারের দৃশ্য দেখা পড়ে।