সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: পৃথিবীতে একদিন মানে আমাদের কাছে ২৪ ঘন্টা। হ্যাঁ, ঘুম থেকে শুরু করে কাজ, স্কুল, অফিস সবকিছুই এর উপর নির্ভর করে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাস্তবে পৃথিবীর ঘূর্ণন (Earth’s rotation) গতি ধীরে ধীরে কমছে। আর সেই কারণে দিনের দৈর্ঘ্য অল্প অল্প করে বাড়ছে। সেই সূত্রে সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছে, তাহলে কি ভবিষ্যতে পৃথিবীতে ২৫ ঘন্টায় দিন হবে? আর যদি উত্তরটি বলা হয় ‘হ্যাঁ’, তাহলে অনেকেই হয়তো চমকে উঠবেন! বিস্তারিত জানতে প্রতিবেদনটি পড়ুন।
২৪ ঘন্টার দিন কি তাহলে সত্যিই পরিবর্তন হবে?
আমরা যে দিনকে ২৪ ঘন্টা বলি, তা মূলত সূর্যের অবস্থানের সঙ্গেই সম্পর্কিত। তবে বিজ্ঞানীরা যখন দূরবর্তী কোনও নক্ষত্রের তুলনায় পৃথিবীর ঘূর্ণন মাপেন, তখন দিনের দৈর্ঘ্য একটু কম হয়। আর একে সাইডেরিয়াল ডে বলা হয়। এমনকি এই সৌর দিনের দৈর্ঘ্য সবসময় সমান থাকে না। কখনও খুব সামান্য বাড়ে, আবার কখনও কমে। তবে দীর্ঘ সময়ের হিসেবে দেখা যায় যে, ধীরে ধীরে তা লম্বা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: প্রয়াত খালেদা জিয়া, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণে বাংলাদেশে শোকের ছায়া
তবে এই পরিবর্তনের পেছনে সবথেকে বড় ভূমিকা চাঁদের। কারণ, চাঁদের মহাকর্ষ টানেই পৃথিবীর সমুদ্রে জোয়ার ভাটা সৃষ্টি হয়। আর এই জল রাশির ওঠানামা পৃথিবীর ঘূর্ণনের সঙ্গে সম্পূর্ণ তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। নাসার একটি রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গিয়েছে, সমুদ্রের তলদেশে জল চলাচলের ফলে ঘর্ষণ তৈরি হয়। আর সেই ঘর্ষণ পৃথিবীর শক্তির সামান্য অংশ শুষে নেয়। এর ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি ধীরে ধীরে কমে যায়। এমনকি শুধুমাত্র চাঁদ নয়, পৃথিবীর নিজের ভেতরেও পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ। নাসার গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গত ১২০ বছরে বরফ গলা, হিমবাহ সংকুচিত হওয়া এবং ভূগর্ভস্থ জল কমে যাওয়ার কারণে পৃথিবীর ভর বন্টনেও এসেছে পরিবর্তন।
যখন গ্রিনল্যান্ড বা আন্টার্কটিকার বরফ বলে সমুদ্রে যায়, তখন পৃথিবীর ভারসাম্য সামান্য বদলে যায়। আর এর ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষ সামান্য দুলতে থাকে। যাকে পোলার মোশন বলা হয়। এতে দিনের দৈর্ঘ্য ধীরে ধীরে সামান্য পরিমাণ বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছে, ২০০০ সালের পর থেকে এই পরিবর্তনের গতি অনেকটাই বেড়েছে। আর এর বড় কারণ হিসাবে ধরা হচ্ছে মানুষের তৈরি জলবায়ুর পরিবর্তন। তবে না, সবটার জন্যই মানুষ দায়ী নয়। প্রাকৃতিক জলবায়ু চক্র দীর্ঘদিন ধরেই এই পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলিতে মানুষের কর্মকাণ্ড বিশেষ করে গ্রীন হাউজ গ্যাসের ফলে এই প্রক্রিয়া আরও বাড়ছে।
আরও পড়ুন: কনকনে শীতের মাঝেই ৩ জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা, কেমন থাকবে দক্ষিণবঙ্গের আজকের আবহাওয়া?
তাহলে কবে আসবে ২৫ ঘন্টার দিন?
এবার অনেকের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসতে পারে, যে খুব তাড়াতাড়ি কি দিনের দৈর্ঘ্য বড় হবে? না, এমনটা নয়। কারণ, বিজ্ঞানীরা বলছে, পৃথিবীতে ২৫ ঘন্টার দিন আসতে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০ কোটি বছর সময় লাগবে। অর্থাৎ, এটি মানুষের সভ্যতার জন্য সেরকম কোনও উদ্বেগের বিষয় নয়। তবে বর্তমানে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ছে মাত্র মিলিসেকেন্ডের হিসাবে, যা পরিমাপেরও যোগ্য নয়। তাই অযথা চিন্তায় পড়ার কোনও কারণ নেই।