সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ইচ্ছাশক্তি থাকলে সবকিছু জয় করা যায়। হ্যাঁ, এমনই প্রমাণ দিলেন উত্তরাখণ্ডের ছোট্ট গ্রাম দিদোলির এক মেয়ে অঙ্কিতা টোপাল (Ankita Topal)। জন্ম থেকেই তার নেই দুই হাত। তবে তিনি থেমে থাকেননি, দমে যাননি, বরং নিজের পায়েই তুলে নিয়েছেন কলম। আর সেই পা দিয়েই লিখে ফেলেছেন ইতিহাস। 2025 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় স্তরে হওয়া জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে গোটা দেশের নজর কেড়েছেন দেশের এই সুযোগ্য সন্তান।
হাত না থাকলেও তিনি থেমে থাকেননি
অঙ্কিতা যখন জন্মিয়েছিলেন, তাঁর পরিবারের চিন্তা ছিল, তাঁদের মেয়ের জীবন কীভাবে চলবে! কারণ, অঙ্কিতার জন্ম থেকেই দুই হাত নেই। তবে অঙ্কিতা বরাবরই দেখিয়ে দিয়েছেন যে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনো নিজের ইচ্ছাশক্তিকে দমিয়ে রাখতে পারে না। শৈশব থেকেই তিনি স্কুলে গিয়েছেন, অন্যসব ছেলেমেয়ের মতোই। আর নিজেই নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন।
চামোলি জেলার কার্নপ্রয়াগ ব্লকের দিদোলি গ্রামের মেয়ে অঙ্কিতা। প্রথমে তিনি স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর মাধ্যমিক পাস করেন দেওয়াল ব্লক থেকে, আর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঋষিকেশ থেকে। এরপর ইতিহাসে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছিলেন দেরাদুনে। তাঁর স্বপ্ন ছিল গবেষণার জগতে প্রবেশ করা। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই তিনি দুই বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন JRF পরীক্ষার জন্য।
2025 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে JRF পরীক্ষায় অঙ্কিতা অংশগ্রহণ করেন। আর সেই পরীক্ষায় তিনি গোটা দেশে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ফেলেন। আর এই সাফল্যের মাধ্যমে তিনি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করারও সুযোগ পান। পাশাপাশি গবেষণার জন্য ভারত সরকারের তরফ থেকে আর্থিক সহায়তা পান। উল্লেখ্য, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী এই পরীক্ষায় বসেন, আর প্রতিযোগিতাও থাকে খুব হাই লেভেলের।
আরও পড়ুনঃ ‘আমাদের চাকর ভাবছেন নাকি!’ মমতার হুঁশিয়ারির বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন BLO-রা
অঙ্কিতার বাবা প্রেম সিং টোপাল বলেছেন, আমরা কখনো কল্পনাও করিনি যে, আমাদের মেয়ে এতটা এগোবে। ও নিজেকে কখনো দুর্বল ভাবেনি। ওর মনোবল আর ইচ্ছাশক্তি ওর কাছে সবকিছু। অঙ্কিতা বলেছেন, এই পথ আমার কাছে সহজ ছিল না। অনেক কষ্ট হয়েছে। আমি চাই, আমার মতো যারা আছে, তারাও যেন নিজের ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে সাফল্যে অর্জন করে। আমার হাত নেই। তবে আমি পায়েই কলম ধরেছি। যদি কেউ মনে করে তার জীবন শেষ, তাহলে আমি তার সেই ধারণা ভেঙ্গে দেব।