প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বছর শেষের মুখেও ব্যাপক দুশ্চিন্তায় পড়ল অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা! এখনও পর্যন্ত চলতি বছরে অবসর নেওয়া পুর কর্মীদের একাংশ গ্র্যাচুইটি এবং এককালীন টাকা পেল না। এমনই অভিযোগ উঠেছে কলকাতা পুরসভার (Kolkata Municipal Corporation) বিরুদ্ধে। এদিকে দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে বকেয়া টাকা পাচ্ছেন না ঠিকাদারেরাও। এমতাবস্থায় সরকারি অনুষ্ঠানে খরচ বৃদ্ধির প্রসঙ্গ উঠে আসছে শিরোনামে।
আগস্ট মাস থেকে ঢোকেনি কোনো টাকা?
আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরে অবসরপ্রাপ্তদের একাংশের অবসরকালীন টাকা (কমিউটেশন ও গ্র্যাচুইটি) শোধ করা হয়েছে। কিন্তু, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কোনও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীই অবসরকালীন প্রাপ্য পাচ্ছেন না। এদিকে, ঠিকাদারেরা এখন ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের বকেয়া পাচ্ছেন। অর্থাৎ তাঁদের বকেয়া পাওনা এখনও এক হাজার কোটি টাকার বেশি। এদিকে কলকাতা পুরসভার অর্থ দফতরের দাবি পুরসভার কোষাগারের অবস্থা একদমই ভাল নয়। জানা গিয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের এককালীন টাকা (কমিউটেশন, গ্র্যাচুইটি) পরিশোধ করতে পেনশন দফতরে শেষ টাকা ঢুকেছে চলতি বছরের আগস্ট মাসে। সেই টাকা দিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে অবসর নেওয়া পুরকর্মীদের একাংশের কমিউটেশন ও গ্র্যাচুইটির টাকা পরিশোধ করা গিয়েছে। পরে আর কোনও টাকা না আসায় বাকি কর্মীদের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সরকারি অনুষ্ঠানে বাড়ছে বাড়তি খরচ
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কলকাতা পুরসভার পেনশন দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘জানুয়ারি থেকে অবসরকালীন টাকা পরিশোধ করতে দরকার প্রায় ২০০ কোটি। কবে টাকা ঢুকবে, জানি না। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অবসর নেওয়া কর্মীরা নিয়মিত দফতরে এসে খোঁজখবর নিচ্ছেন। আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে কিন্তু আমরা সত্যিই নিরুপায়!’’ এক্ষেত্রে এই দুর্দশার অন্যতম কারণ হল সম্পত্তিকর বাবদ বকেয়া। দীর্ঘ কয়েক হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে সম্পত্তিকরের টাকা মেটাচ্ছেন না একাধিক। যার ফল ভুগতে হচ্ছে পুরসভাকে। তার উপর রাজ্য সরকারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খরচ তো রয়েছেই। ২০১২ সাল থেকে কলকাতা পুরসভা প্রতি বছর নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের জন্য বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যয় করতে হয়। ২০২৪ ও ২০২৫ সালে মোট খরচ হয়েছে ৬০ লক্ষ টাকা। ফলস্বরূপ আরও চাপ বেড়েছে কোষাগারে
আরও পড়ুন: দুর্ঘটনা নয়, খুন করা হয়েছে জুবিন গর্গকে! বিস্ফোরক দাবি অসমের মুখ্যমন্ত্রীর
উল্লেখ্য শুধু এবছরের অবসর নেওয়া কর্মীরাই নন, গত বছরে অবসর নেওয়া কর্মীরাও অনিয়মিত টাকা পাচ্ছেন। এর মধ্যেই কেউ বাড়ি তৈরির জন্য, কেউ মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য ওই টাকার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, বকেয়া মেটানোর দাবিতে একাধিকবার আন্দোলন হয়েছে। বিরোধীরাও সেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষ দাবি জানিয়েছেন যে, ‘‘পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা এক বছর ধরে প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত। এই অবস্থায় পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে সরকারি অনুষ্ঠানের খরচ বহন করার অর্থ পুরসভাকে আরও বিপাকে ফেলে দিচ্ছে।’’ তবে এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের তরফে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।