নেত্রহীন হলেও যায়নি দমে! ২২ বছরেই তিন-তিনটি সরকারি চাকরি হাসিল করে নজির রোশনের

Roshan Kumar

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: জীবনে বাধা আসলেও সফলতা পিছু ছাড়ে না। হ্যাঁ, ইচ্ছাশক্তি থাকলে সবই সম্ভব। এমনই এক অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প লিখেছেন ঝাড়খণ্ডের রোশন কুমার (Roshan Kumar)। ছোটবেলা থেকেই তার দৃষ্টিশক্তির সমস্যা ছিল। তবুও তিনি দমে যাননি। মাত্র 22 বছর বয়সেই পরপর তিনটি সরকারি চাকরি পেয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে, সফলতা পাওয়ার জন্য চোখ লাগে না, বরং স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা আর ইচ্ছাশক্তি থাকলেই হয়।

কে এই রোশন কুমার?

রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গেল, রোশন কুমার ঝাড়খণ্ডের কোডার্মা জেলার ডমচাঞ্চ এলাকার বাসিন্দা। তিনি জন্ম থেকেই নিস্ট্যাগমাস নামক এক চোখের রোগে ভুগছিলেন। এই কারণেই তাঁর দৃষ্টি শক্তি দিনের পর দিন দুর্বল হয়ে যায়। প্রথমে পরিবার বুঝতেই পারেনি যে, ছেলেটির চোখে সমস্যা হচ্ছিল। পরে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটি ধরা পড়ে। তবে এই চিকিৎসা করালেও আরোগ্য লাভ হয়নি।

2018 সালে রোশনের বাবা বিনোদ কুমার শিক্ষকতার কাজ থেকে অবসর নিয়েছিলেন এবং সেই বছরই রোশন কুমার প্রায় সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। একদিকে বাবার অবসর, আর অন্যদিকে চোখের সমস্যার জন্য সে তাঁর পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি।

দাদার কাঁধে ভর করেই এগিয়েছে রোশন

তবে এই কঠিন সময়ে তার পরিবারের দায়িত্ব তুলে নেন রোশনের দাদার সঞ্জীব কুমার। বাবার অবসরের পর সংসারে আর্থিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সঞ্জীব তাঁর ভাই বোনদের পড়াশোনার খরচ, সংসারের দায়িত্ব একাই নিজের কাঁধে তুলে নেন। রোশনকে বাড়িতে পড়ানো শুরু করেন, আর ছোট বোন স্নেহাকেও পড়াশোনায় সাহায্য করেন।

রোশন প্রথমে একটি পোস্ট অফিসে চাকরি পান। তখনো তাঁর চোখে ভীষণ সমস্যা ছিল। আর সেই সময় তাঁর দাদা সঞ্জীব নিজেই কাজের ফাঁকে ভাইয়ের সঙ্গে গিয়ে গ্রামে গ্রামে চিঠি বিলি করত। তবে চিঠি বিলি করেই থেমে থাকেননি রোশন কুমার। 

হ্যাঁ, এরপর তিনি SSC CGL পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিসার পদে চাকরি পান। কিন্তু তিনি সেখানেও থেমে থাকেননি। সম্প্রতি JPSC অর্থাৎ, ঝাড়খণ্ড পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে 340 তম স্থান অর্জন করেছেন রোশন কুমার। এরপর তাকে রাজ্যের অর্থ দপ্তরে নিয়োগ করা হয়েছে। 

তবে এই JPSC পরীক্ষায় রোশনলে সহায়তা করেছিলেন তার ছোট বোন স্নেহা। কারণ তিনি চোখে দেখতে পান না বলে স্নেহা তাঁর ভাইয়ের জন্য প্রশ্নপত্রে উত্তর লিখে দেন। আর এই সহায়তার জেরে সম্পূর্ণ পরীক্ষাতে সফলভাবে উত্তীর্ণ হন রোশন।

আরও পড়ুনঃ ভূমিকম্পের পর রাশিয়ায় জেগে উঠল আগ্নেয়গিরি, বেরোচ্ছে ফুটন্ত লাভা

দাদার স্বপ্নপূরণ ভাইয়ের

এদিকে রোশনের দাদা সঞ্জীব নিজেও একবার JPSC পরীক্ষা দিয়েছিল। তবে তাতে সফলতা অর্জন করতে পারেনি। আর আজ রোশনের সাফল্য তাঁর চোখে জল এনে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, আমি যেটা পারিনি, সেটা আমার ভাই পেরেছে। ও আমার স্বপ্ন পূরণ করেছে। ছোট বোন স্নেহাও এ নিয়ে গর্বিত। সে জানে, ভাইয়ের লড়াইয়ে তাঁর পাশে থাকার সুযোগ পাওয়াটাই তার জীবনের সবথেকে বড় পুরস্কার।

Leave a Comment