প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সংসারের আর্থিক চাপে পরে একলহমায় ম্লান হয়ে গেল ছোটবেলার অপরিমেয় আনন্দ! সেই কারণে অভাবের সঙ্গে লড়াই করতে পড়াশোনার বয়সে স্কুলের বই খাতা ছেড়ে এখন ছোট্ট কাঁধে তুলে নিল গোটা পরিবারের দায়িত্ব। লোকাল ট্রেনে ঘুরে ঘুরে বাদাম ঝুরিভাজা বিক্রি করে কোনরকমে সংসার চালায় হাবড়ার অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়া শুভজিৎ দাম। ক্ষুদে পড়ুয়ার এই সংগ্রামের কাহিনী শুনলে চোখে জল চলে আসবে আপনারও।
ভাইরাল পোস্ট
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক পোস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার বাসিন্দা শুভজিৎ দামের বাবা হলেন কৃষ্ণপদ দাম। তিনি ছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী। গত বছরের দুর্গাপুজোর পর হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। শেষে নানা শারীরিক পরীক্ষার পর তাঁর শরীরে ধরা পড়ে কিডনির সমস্যা। উল্টোদিকে প্রায় একই সময় মা জয়ন্তী রানী দামেরও হয় দু’বার ব্রেন স্ট্রোক। হঠাৎ করেই পরিবারে নেমে আসে অর্থাভাব। দিনের পর দিন পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে শেষে পড়াশোনা ছেড়ে শুভজিৎ ট্রেনে হকারির কাজ ধরতে বাধ্য হয়।
আর্থিক চাপে গোটা সংসার
শুভজিৎ জানিয়েছে যে সে সকাল হলেই বাদাম ঝুরিভাজার প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে যায় সে। এরপর এক ট্রেন থেকে আরেক ট্রেনে হকারি করে বেড়ায় দুপুর পর্যন্ত। এরপর বিকেলের দিকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে কারণ, মা-বাবার ওষুধ খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। দিনে গড়ে মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা উপার্জন হচ্ছে তার। সেই টাকাই মায়ের হাতে তুলে দেয়। আর ওই টাকাতেই গোটা সংসার চালানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দিনের পর দিন চিকিৎসার খরচ, সংসারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় একেবারে দিশাহারা হয়ে পড়েছে গোটা পরিবার।
আরও পড়ুন: গ্যাস তুলছে না, তবে মিলছে LPG-র সাবসিডি! বিষ্ণুপুরের গ্রাহকরা পাচ্ছেন ভূতুড়ে ক্যাশমেমো
যদিও আশপাশের মানুষজন ও প্রতিবেশীরা তাঁদের সাধ্য মতন সাহায্য করেছেন শুভজিৎ-এর পরিবারকে। তবে তাতেও দীর্ঘস্থায়ী কোন সমাধান মিলছে না। কেবলমাত্র ভরসা ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর উপর। কিন্তু এত কিছুর পরেও মনবল ভাঙেনি শুভজিতের। তার চোখে এখনো ভাসছে আশার আলো। তার দৃঢ় বিশ্বাস খুব শীঘ্রই এই খারাপ সময় কেটে যাবে। এবং একদিন এমন আসবে যেদিন সে হকারই নয় বরং হাতে তুলে নেবে বই খাতা।