সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: এবার চুরি হয়ে যাচ্ছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট (Fingerprint Scam), তাও নাকি 10 হাজার টাকার বিনিময়ে! প্রযুক্তির অপব্যবহার এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, যে সাধারণ মানুষ টের পাচ্ছে না। এমনকি এই প্রতারণা চক্রে জড়িয়ে পড়ছে পোস্ট অফিসের ডাক সেবকরা! কিন্তু কী এই প্রতারণা, আর কীভাবেই বা ঘটছে? জানতে হলে চোখ রাখুন আর্টিকেলটির উপর।
মাত্র 10 হাজার টাকায় চুরি হচ্ছে আঙুলের ছাপ
পুলিশি তদন্তে সম্প্রতি উঠে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য। জানা যাচ্ছে, সিলিকন মোল্ড কিটের সাহায্যে পোস্ট অফিসে কর্মরত কিছু আধার অপারেটর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে দিচ্ছে 8 থেকে 10 হাজার টাকায়। এমনকি শুধুমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট নয়, বরং UIDAI পোর্টালের ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড সবকিছুই নিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
আর এই তথ্যগুলিকে ব্যবহার করেই একেবারে আসল আধার কার্ড তৈরি করে করা হচ্ছে। একেবারে পুরোপুরি UIDAI পোর্টালের মাধ্যমেই তৈরি সেই আধার, যার উপর ভিত্তি করেই প্যান কার্ডসহ বিভিন্ন ভারতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে ফেলছে অনুপ্রবেশকারীরা। ফলে বিদাসী হলেও কাগজে-কলমে তারা ভারতীয় নাগরিক হয়ে যাচ্ছে।
উত্তর দিনাজপুর থেকে উঠে আসলো মূল চক্রীর নাম
বর্তমানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি বীরভূমে দুই ধৃত ব্যক্তির জেরা থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই জালচক্রের মূল মাথা উত্তর দিনাজপুরের একটি পোস্ট অফিসের চুক্তিভিত্তিক কর্মী বিধান মুর্মু। হ্যাঁ, প্রথমে তদন্তকারীরা ভেবেছিলেন যে তিনি নিজেই এই ভুয়ো নথিগুলো তৈরি করছে। তবে জেরা করায় তিনি স্বীকার করেন যে, টাকার লোভেই তিনি এইসব করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, UIDAI পোর্টালে লগইনের জন্য দরকারী ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড, ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রতারক চক্রের হাতে তুলে দিয়েছেন। আর সিলিকন কিটের মাধ্যমে নেওয়া সেই আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে আধার তৈরির কাজে। এমনকি ভিপিএন ব্যবহার করে কম্পিউটারের আইপি অ্যাড্রেস রেখে দেওয়া হচ্ছেজিও যাতে UIDAI এর কাছে বিষয়টি না ধরা পড়ে।
আরও পড়ুনঃ প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ, পদক নিলেও এই বিশেষ পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করেন সিরাজ! কারণ কী?
উল্লেখ্য, একজন ডাক সেবকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিক্রি হচ্ছে 8 থেকে 10 হাজার টাকার বিনিময়ে। আর রাজ্যের বিভিন্ন পোস্ট অফিসে কর্মরত একাংশ আধার সেন্টারের কর্মীদের সাহায্যেই এই বিরাট চক্র চলে আসছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকার বেশি আয় করে ফেলছে এই প্রতারণা করে।
তালিকায় পোস্ট অফিসে কর্মরত আরো অনেকেই
তবে গোয়েন্দা সূত্র মারফৎ খবর পাওয়া গিয়েছে, এই ভুয়ো চক্রে বা জাল চক্রে জড়িত ডাক সেবকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আর শুধু তাই নয়, এই প্রক্রিয়ায় কতজন অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছে এবং কাদের নিয়ে এই জালিয়াতি করা হয়েছে, সে বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ইতিমধ্যে UIDAI-কে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি আধার পোর্টালের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আরো জোরদার করার কথা বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। এমনকি UIDAI এর তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে বিশেষ নজরদারী দেওয়া হবে বলেই জানানো হচ্ছে বেশ কিছু রিপোর্টে।