সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: বাংলায় বসবাস করেও হাতে আসলো অসমের এনআরসি ট্রাইব্যুনালের নোটিশ (NRC Notice)! হ্যাঁ, সকালে ঘুম ভাঙতেই যেন জীবনের গতি বদলে গেল ফালাকাটার ময়মনসিংহপাড়ার গৃহবধূ অঞ্জলি শীলের। আসলে শুক্রবার সকালে ফালাকাটা থানার আইসি অভিষেক ভট্টাচার্য তার হাতে একটি বিতর্কিত নোটিশ তুলে দেন, যা ঘিরেই রাজ্য-রাজনীতিতে বিতর্ক তুঙ্গে।
কী লেখা ছিল সেই নোটিশে?
রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গিয়েছে, নোটিশটি অসম ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে এসেছে। সেই নোটিশে অঞ্জলি দেবীকে অনুরোধ করা হয়েছিল যে, তার নাগরিকত্ব সংক্রান্ত ডকুমেন্ট এবং ব্যাখ্যা অসমে গিয়ে জমা দিতে। বলতে গেলে, তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে বিদেশি নাগরিক হিসেবে। সেই অভিযোগেই তাকে আদালতে ডাকা হয়েছে।
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ফালাকাটার জটেশ্বর অঞ্চলের বাসিন্দা অঞ্জলি শীল। তার বয়স ৫০। স্বামী নিত্য শীল পেশায় একজন সেলুনের ব্যবসায়ী। তাদের পরিবার ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই অঞ্চলে বসবাস করছেন বলে খবর। নোটিশ হাতে পাওয়ার পর অঞ্জলি কার্যত ভেঙে পড়েছে। তার দাবি, আমার সমস্ত কাগজপত্র রয়েছে। আমি ভারতীয়। কোনো অনুগ্রহ চাই না। আমি আইনি পথে লড়ব।
এদিকে নোটিশ পাওয়ার পর তার পরিবারও আতঙ্কে রয়েছে। মানসিক চাপে বন্ধ করে দিতে হয়েছে সংসার চালানোর একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম সেলুন। নিত্য শীল বলেছেন, আমরা এত বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। এখন হঠাৎ করেই আমাদেরকে বহিরাগত বলা হচ্ছে। অসমে গিয়ে প্রয়োজনে লড়াই করব। আমরা ভারতীয়, আমাদের এখান থেকে কেউ সরাতে পারবে না।
রাজনীতির মঞ্চে ঝড়
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য-রাজনীতি উত্তপ্ত। কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, অসম থেকে বাংলার মানুষদের নামে এনআরসি নোটিশ আসছে। এমনকি তিনি দুটি নাম উল্লেখ করেছিলেন। প্রথমত, কোচবিহারের দিনহাটার উত্তম ব্রজবাসী এবং দ্বিতীয়ত, আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার অঞ্জলি শীল।
আরও পড়ুনঃ হঠাৎ উধাও সব চাকর-বাকর! গুরগাঁওয়ে একসঙ্গে ‘লাপাতা’ শয়ে শয়ে কাজের লোক
যদিও প্রথমে বিজেপির তরফ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, অঞ্জলির নামে কোনোরকম নোটিশ আসেনি। তৃণমূল ভুয়ো প্রচার করছে। ওদিকে অঞ্জলি শীলও জানিয়েছিলেন যে, তাঁর কাছে কোনও নোটিশ আসেনি। কিন্তু শুক্রবারই সব ভুল ভাঙে। এদিকে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, নোটিশে থানার নাম ঠিক থাকলেও জেলা হিসেবে ভুলবশত কোচবিহার লেখা ছিল। তাই এই বিভ্রান্তি।
প্রসঙ্গত তৃণমূল কংগ্রেসের সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, আগামী 27 জুলাই থেকে এই ঘটনাকে ঘিরে রাজ্য জুড়ে প্রচার অভিযান করা হবে। আর উদ্দেশ্য একটাই, মানুষকে সচেতন করে তোলা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের এনআরসি নীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো।