হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ নয়! অঙ্গনওয়াড়ি নিয়োগ নিয়ে রাজ্যকে যা জানাল সুপ্রিম কোর্ট

ICDS Recruitment Case

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: হাইকোর্টের একক এবং ডিভিশন বেঞ্চের পথেই হাঁটল সুপ্রিম কোর্ট! পশ্চিমবঙ্গের আইসিডিএস নিয়োগ মামলায় (ICDS Recruitment Case) হাই কোর্টের নির্দেশের উপর কোনও স্থগিতাদেশ মিলল না! শুধু তাই নয়, মামলা চললেও আইসিডিএস- এর ‘সুপারভাইজার’ পদে নিয়োগে থাকছে না কোনও বাধা। অর্থাৎ রাজ্য সরকার চাইলে নিয়োগ করতেই পারে। গত মঙ্গলবার, পশ্চিমবঙ্গের আইসিডিএস মামলায় এমনটাই স্পষ্ট জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

গাইডলাইন পরিবর্তন নিয়ে বিবাদ

আইসিডিএসে সুপারভাইজার পদে নিয়োগ করতে আগে কেন্দ্রের গাইডলাইন ছিল, শূন্যপদের ৭৫ শতাংশ ডায়রেক্ট রিক্রুটমেন্ট হবে। সেক্ষেত্রে যোগ্যতা ছিল স্নাতক পাশ। বাকি ২৫ শতাংশ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য পদোন্নতিতে সুপারভাইজার পদ হিসেবে বরাদ্দ থাকবে। এক্ষেত্রে কোনও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর ১০ বছরের অভিজ্ঞতা এবং মাধ্যমিক পাশ হলে সুপারভাইজার পদে পদোন্নতির জন্য আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গাইডলাইন পরিবর্তন করে কেন্দ্র। তখন জানিয়ে দেওয়া হয় যে, নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়মে বড় বদল আনা হচ্ছে। শূন্যপদের ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ করা হবে। এবং বাকি ৫০ শতাংশ পদোন্নতি করা হবে কর্মীদের। কিন্তু এই গাইডলাইন মানতে নারাজ পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

রাজ্যের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা

আইসিডিএসে সুপারভাইজার পদে নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকারের দাবি ছিল, কেন্দ্রের নয়া বিজ্ঞপ্তিটি যেহেতু ২০১৫ সালের, তাই ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের আগে পর্যন্ত শূন্যপদগুলিতে ২৫ শতাংশ পদোন্নতি এবং ৭৫ শতাংশ নতুন নিয়োগ করা হবে এবং ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তৈরি হওয়া শূন্যপদগুলিতে ৫০ শতাংশ পদোন্নতি এবং ৫০ শতাংশ নতুন নিয়োগ করা হবে। কিন্তু সেই নিয়ম মানতে চান না অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই এই নিয়মের বিরোধিতা করে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা প্রথমে কলকাতা হাই কোর্টের একক বেঞ্চে মামলা করেন। আর সেই সময় একক বেঞ্চ মামলাকারীদের পক্ষ নিয়ে জানিয়ে দেয় যে কেন্দ্রের ২০১৫ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুসারেই নিয়োগ করতে হবে। সেক্ষেত্রেও মানতে চায়নি রাজ্য।

সুপ্রিম কোর্টে মামলা উঠল রাজ্যের

কলকাতা হাইকোর্টে আইসিডিএস সুপারভাইজার পদে নিয়োগ নিয়ে একক বেঞ্চের ওপর জারি করা নির্দেশকে এরপর রাজ্য সরকার চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়। সেখানেও একক বেঞ্চকেই মান্যতা দেওয়া হয়। জানিয়ে দেওয়া হয়, কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি অনুসারেই নিয়োগ করতে হবে। তাই সবশেষে হাই কোর্টের একক বেঞ্চ এবং ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিকেই প্রাধান্য দেওয়ার পরে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার, সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি পঙ্কজ মিথল এবং বিচারপতি প্রসন্ন বি বরালের বেঞ্চে আইসিডিএস সুপারভাইজার পদে নিয়োগ নিয়ে মামলা করা হয়। সেখানে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের হয়ে এজলাসে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী। অন্যদিকে রাজ্যের হয়ে উপস্থিত ছিলেন রাকেশ দ্বিবেদী। তিনি চেয়েছিলেন হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ। তবে সেই নির্দেশ খারিজ করল শীর্ষ আদালত।

আরও পড়ুন: ‘দেশবিরোধীর আচরণ করছে!’ আর্মির ট্রাক আটকানোর ঘটনায় বোমা ফাটালেন দিলীপ ঘোষ

এখনই কোনও স্থগিতাদেশ নয় শীর্ষ আদালতের

জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার, আইসিডিএস সুপারভাইজার পদে নিয়োগ সংক্রান্ত কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশের আর্জি জানায় রাজ্য সরকার। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, ৩৩৭৬ নিয়োগ নিয়ে স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে না। সব পক্ষের থেকে হলফনামা তলব করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ছ’সপ্তাহ পরে অর্থাৎ আগামী ২৮ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। রাজ্যের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘রাজ্যে নিয়োগ সমস্যা বাড়বে এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুরা বঞ্চিত হবে। কাজ আটকে যাবে।’ তবে শীর্ষ আদালত রাজ্যকে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে পারবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে এও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে এই সময়ের মধ্যে যে নিয়োগগুলি হবে, তার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে এই মামলার রায়ের উপরেই।

Leave a Comment