ওষুধের দাম বকেয়া কয়েক কোটি! হাইকোর্টে ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার

Nabanna

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বছর ঘুরলেই ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই রাজনৈতিক ঘুঁটি সাজিয়ে চলেছে শাসকদল থেকে শুরু করে বিরোধীরা। আর এই নির্বাচনের মুখে ফের একের পর দুর্নীতির খবর উঠে আসছে শিরোনামে। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে বালি পাচার কাণ্ড এবং ভুয়ো পাসপোর্ট মামলায় ED এবং CBI হানা দিচ্ছে। আর এই অবস্থায় আরও এক কলঙ্ক জুটল নবান্নের কপালে। অভিযোগ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে ওষুধ সরবরাহকারী বহু সংস্থার কোটি-কোটি টাকা বছরের পর বছর বকেয়া রেখেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (Nabanna)।

কোটি কোটি টাকার ওষুধের দাম মেটাচ্ছে না নবান্ন

আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিগত বেশ কয়েকমাস ধরে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে ওষুধ সরবরাহকারী বহু সংস্থা ওষুধ পাঠালেও সেই ওষুধের দাম মেটাচ্ছিল না নবান্ন। বছরের পর বছর ধরে কোটি কোটি টাকা বকেয়া থেকে গিয়েছে। প্রথমদিকে ঝামেলা না চেয়ে সকলে নবান্নকে টাকা পাঠানোর জন্য চিঠির পর চিঠি লিখেছিল, কিন্তু সেই চিঠির কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে আর নয়, প্রতিবাদের সুরে শেষমেশ টাকা আদায়ে আইনি পথ বেছে নিয়েছিল কলকাতার এন্টালির এক ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থা। গত জানুয়ারি মাসে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিল এই ওষুধ সংস্থাগুলি। সংস্থার দাবি ছিল, ২০১৭ থেকে স্বাস্থ্য দফতরে তাদের বকেয়া থাকা ১ কোটি ৫২ লক্ষ ১৬ হাজার ৪৪২ টাকা ৪১ পয়সা দিতে হবে। আর তাতেই এবার কড়া নির্দেশ দিল হাইকোর্ট।

রাজ্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ওষুধ সংস্থার

মামলাকারী কলকাতার এন্টালির ওষুধের সংস্থা জানিয়েছে, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় বিভিন্ন সংস্থার মোট বকেয়ার পরিমাণ ৫৪ কোটি টাকা। এর বেশিরভাগই স্ট্রোকের ওষুধ, ক্যানসারের ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, ডায়াবিটিসের ওষুধ, থ্যালাসিমিয়া-হিমোফিলিয়ার ওষুধ, আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট ইত্যাদি সরবরাহ করে। কিন্তু সেই ওষুধের মূল্য দেয় না রাজ্য। সংস্থার কর্ণধার চন্দ্রশেখর মণ্ডল জানান, “ বিগত ৩০ বছর ধরে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরে ওষুধ দিচ্ছি। গত ৫-৬ বছরের মতো খারাপ অবস্থা আগে কোনওদিন দেখিনি। বকেয়ার জেরে ওষুধ দিতে পারব না বললেই স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা সংস্থাকে ব্ল্যাক লিস্টেড করার হুমকি দিচ্ছেন। তাই আমরা মুম্বই, গুজরাত, বেঙ্গালুরু থেকে ওষুধ আনি। ধার করে কত ওষুধ আনব! তাই এবার বাধ্য হয়ে মামলা করতে হল।

বড় নির্দেশ হাইকোর্টের

রাজ্য সরকারের ওষুধ কেনার বকেয়া টাকা নিয়ে মামলা কলকাতা হাইকোর্টে উঠলে বিচারক সম্পূর্ণ অভিযোগ খতিয়ে দেখে নির্দেশ দেন যে, আগামী ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই বেসরকারি সংস্থাকে পাইপয়সার হিসাব মিটিয়ে দিতে হবে রাজ্যকে। এরপর ১০ ডিসেম্বর আদালত দু’পক্ষকে ডেকে চূড়ান্ত পরিস্থিতি জানতে চাইবে। টাকা যদি রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর না মেটানোর ব্যবস্থা করে তাহলে কড়া শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছে আদালত। যদিও ওইদিন আদালতে রাজ্য সরকারের আইনজীবী জানান, সরকার বকেয়া টাকার মধ্যে ৬৬ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যে রিলিজ করে দিয়েছে। বাকি ৯০ লক্ষ টাকাও দ্রুত দেওয়া হবে। এবার দেখার পালা নবান্ন আদালতের নির্দেশ কতটা পালন করে।

আরও পড়ুন: নয়া বিতর্কে মহুয়া মৈত্র! করিমপুরের মাঠে বিয়ের রিসেপশন করে নিশানায় তৃণমূল সাংসদ

উল্লেখ্য, বকেয়া চাওয়ার দাবি নিয়ে রাজ্য সরকারের রাজরোষে যাতে পড়তে না হয় এই ভোট অনেক ওষুধ সংস্থা সিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করে চলেছে। তবে ভয় কাটিয়ে তাঁদের মধ্যে একজন যে গলা তুলে প্রতিবাদ করেছে সেই নিয়ে সকলেই বেশ প্রশংসা করেছে। উত্তর কলকাতার এক ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থার কর্তার কথায়, “বেড়ালের গলায় ঘণ্টা কে বাঁধবে, তা নিয়ে এত দিন সকলে ইতস্তত করছিল। একজন সেই ঘণ্টা বেঁধে দিয়েছে। এ বার একজোট হয়ে আমাদের এগোতে হবে।”

Leave a Comment