হাইকোর্টের নির্দেশে খুলে গেল চাকরিহারার কপাল

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সম্প্রতি আপার প্রাইমারি অর্থাৎ কর্মশিক্ষা ও শারীরিক শিক্ষার জন্য তৈরি হওয়া সুপার নিউমেরারি পদের ক্ষেত্রে শূন্যপদ থাকলেও কেন নিয়োগ হচ্ছে না প্রার্থীদের এই প্রশ্নে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করল কলকাতা হাই কোর্ট। আর এবার সেই মামলায় মামলাকারীর পক্ষ নিল বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য। জানিয়ে দিলেন শূন্য পদ থাকলে মামলাকারীকে কাজে যোগ সুযোগ দিতে হবে।

ঘটনাটি কী?

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গত ৩ এপ্রিল SSC-র ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল করে দিয়েছিল। যার ফলে নবম-দশম শ্রেণিতে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছিল। এদিকে মৌসুমী মণ্ডল নামে একজন চাকরি প্রার্থী ২০১৬ সালের নবম-দশম শ্রেণির কর্মশিক্ষা ও শারীরিক শিক্ষা এবং উচ্চ প্রাথমিকে উভয় নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই সফল হয়েছিলেন। কিন্তু নবম-দশমের নিয়োগ প্রক্রিয়া আগে শুরু হওয়ায় তিনি সেই পদেই শিক্ষকতা শুরু করেন।

SSC-র কাছে আবেদন করেন ওই শিক্ষক

পরে যদিও ২০২২ সালে কর্মশিক্ষা ও শারীরিক শিক্ষার জন্য তৈরি হওয়া সুপার নিউমেরারি পদের জন্য মৌসুমী মণ্ডল নামে সেই চাকরি প্রার্থীকে ডাকা হয়। কিন্তু যেহেতু তিনি সেই সময় কর্মরত ছিলেন তাই তিনি সেই পদে যোগ দিতে চাননি। এদিকে চলতি বছর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল হয়ে যাওয়ায় মৌসুমী নামের ওই শিক্ষিকার চাকরি চলে যায়।

এদিকে তাঁর বিরুদ্ধে চাকরি সংক্রান্ত কোনও অনিয়মের অভিযোগ নেই। তাই আপার প্রাইমারিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য SSC-র কাছে আবেদন করেন তিনি।

মামলা ওঠে হাইকোর্টে!

কিন্তু সেই আবেদনে দীর্ঘদিন ধরে কোনও উত্তর বা পাল্টা জবাব দিচ্ছে না স্কুল সার্ভিস কমিশন। আর তাই এবার সেই সমস্যার সুরাহার জন্য মৌসুমী মণ্ডল কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের এজলাসে সেই মামলা উঠেছিল। এবার সেই মামলায় বিস্ফোরক রায় দিলেন বিচারপতি ভট্টাচার্য।

এদিন মামলাকারীর আইনজীবী অভিযোগ করেন যে, “সুপ্রিম নির্দেশ মেনে পুরনো চাকরিতে ফিরে যাওয়ার পর্যবেক্ষণ ছিল। এমনকি সুপারিশ পত্র পাওয়ার পরেও ৯০ দিন পর্যন্ত কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কমিশনের জন্য উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাঁর মক্কেলকে।”

SSC-র ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ বিচারপতি

মামলাকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে এদিন বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য কমিশনের উদ্দেশে প্রশ্ন তোলেন যে, ‘কার ভুলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হয়েছে? এবং যোগ্য শিক্ষকদের কেন বাড়ি ফিরতে হয়েছে?’

সেই প্রশ্নের জবাবে এদিন কমিশনের আইনজীবী আদালতকে জানান, ‘নিয়োগ বাতিলে কমিশনের কোনও ভুল ছিল না। অফিসাররা বদলে গিয়েছেন। এটা নিউ কমিশন।’ আর এই আবহে দুই পক্ষের মন্তব্য শোনার বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য মামলাকারীর পক্ষে সিদ্ধান্ত নেন।

আরও পড়ুন: হু হু করে কমছে সোনা, রুপোর দাম! কপাল খুলল মধ্যবিত্তদের, আজকের রেট

শূন্য পদ থাকলেই করতে হবে নিয়োগ!

এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য স্পষ্ট এসএসসিকে জানিয়ে দেন যে আপার প্রাইমারিতে অর্থাৎ কর্মশিক্ষা ও শারীরিক শিক্ষার জন্য তৈরি হওয়া সুপার নিউমেরারি পদের জন্য নিয়োগ করতে হবে চাকরিহারা মামলাকারী শিক্ষককে। সেক্ষেত্রে শূন্য পদ থাকলে মামলাকারীকে কাজে যোগ সুযোগ দিতে হবে। আর যদি শূন্য পদ না থাকে তাহলে আদালত জানিয়েছে, ভবিষ্যতে যখন এই ক্ষেত্রে নিয়োগ হবে তখন মামলকারীকে সুযোগ দেওয়া হবে। আর সেই ব্যাপারে কমিশনকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

Leave a Comment