সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: বিদেশে ভ্রমণের স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। তবে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্র যদি কিছু হয়ে থাকে তা হল পাসপোর্ট। তবে সেই পাসপোর্টকে আরও স্মার্ট ও নিরাপদ করার জন্য ভারত সরকার নতুন পথে হাঁটছে। এবার পাসপোর্ট ব্যবস্থায় আসছে বিরাট পরিবর্তন। কারণ, কেন্দ্র সরকার আনতে চলেছে নেক্সট জেনারেশন ই-পাসপোর্ট (e-Passport)। আর এই ই-পাসপোর্ট শুধুমাত্র ভ্রমণের জন্য নয়, বরং ডিজিটাল আইডেন্টিটি হিসেবেও কাজ করবে যা ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা আরও পাঁচগুণ বাড়াবে। বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন আজকের প্রতিবেদনটির উপর।
কেমন হবে ভবিষ্যতের পাসপোর্ট?
একাধিক সরকারি সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, নতুন এই ই-পাসপোর্টে এমন প্রযুক্তি যুক্ত থাকবে যা আগে শুধুমাত্র উন্নত দেশগুলির ভ্রমণের ডকুমেন্টেই দেখা যেত। জানা যাচ্ছে, এই নতুন পাসপোর্টে থাকবে ইন্টারলকিং মাইক্রো লেটার, রিলিফ টিন্টস এবং উন্নত নিরাপত্তা প্রিন্টের মতো ফিচার। আর এর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হল RFID চিপ এবং অ্যান্টেনা, যেটিতে সমস্ত বায়োমেট্রিক তথ্য এনক্রিপটেড ফরম্যাটে সুরক্ষিত থাকবে। এমনকি এই তথ্য আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা ICAO এর মানদন্ড অনুযায়ী সংরক্ষণ করা থাকবে। ফলত নথি নকল করা বা পরিবর্তন করার কোনও প্রশ্নই উঠছে না।

এদিকে এতদিন যাবৎ ইমিগ্রেশন লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ঝামেলা পোহাতে হতো সাধারণ মানুষের। তবে এবার সেই সময় অনেকটাই কমবে। কারণ, এই নতুন ই-পাসপোর্টের RFID চিপের মাধ্যমে কন্ট্যাক্টলেস ডেটা রিডিং সম্ভব হবে। অর্থাৎ, হাতে দেওয়া পাসপোর্টের মতো আর পাতা উল্টানোর কোনও দরকার পড়বে না। শুধু স্ক্যান করলেই সমস্ত তথ্য সামনে আসবে। বলাবাহুল্য, বিদেশ মন্ত্রকের দেওয়া একটি তথ্য অনুযায়ী, দেশে ইতিমধ্যেই 80 লক্ষ ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে, আর বিদেশী মিশনের মাধ্যমেও 60 হাজারের বেশি মানুষ ই-পাসপোর্ট পেয়েছেন। তবে 2035 সালের জুন মাসের মধ্যে সমস্ত পাসপোর্ট ই-পাসপোর্টে বদলে দেওয়া হবে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।
গোটা ব্যবস্থায় হবে AI চালিত
উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাস থেকেই চালু হয়েছে Passport Seva 2.0। যেখানে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও যুক্ত করা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় রয়েছে AI চালিত চ্যাটবট ও ভয়েসবটের মতো সুবিধা। পাশাপাশি রয়েছে অনলাইনে ডকুমেন্ট আপলোড, অটো ফিলড ফর্ম, ইউপিআই এবং কিউআর ভিত্তিক ফি জমা দেওয়ার সুবিধা, উন্নত ফেস স্ক্যানের প্রযুক্তি, ডেটা অ্যানালিডিক্স ও AI এলার্ট এবং টাচস্ক্রিন্ট ফিডব্যাক সিস্টেমের মতো ফিচার। এছাড়া গোটা সিস্টেমটাই যুক্ত রয়েছে DigiLocker, আধার এবং প্যানের সঙ্গে, যা ডকুমেন্টকে আরও নিরাপদ ও নির্ভুল করে তুলছে। উল্লেখ্য, নয়ডা চেন্নাই এবং বেঙ্গালুরুতে ইতিমধ্যেই এই অত্যাধুনিক ডেটা সেন্টার তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মধ্যবিত্তদের স্বস্তি, অনেকটাই কমল সোনা, রুপোর দাম! আজকের রেট
বলাবাহুল্য, প্রতিবছর দেশে প্রায় 1.5 কোটি পাসপোর্ট ইস্যু হয়। তাই পরিষেবাকে আরও চাঙ্গা করতে সমস্ত জেলায় মোবাইল পাসপোর্ট সেবা ভ্যান মোতায়েন করা হয়েছে। আর বর্তমানে মাত্র 32টি লোকসভা কেন্দ্র বাদে গোটা দেশেই এই পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তাই পরিকল্পনা করা হচ্ছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই শূন্যস্থানগুলোও পূরণ করা হবে। এক কথায়, পাসপোর্ট পরিষেবায় এবার আসবে আমূল বদল।