সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: দেশ জুড়ে কত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইথানল মিশ্রিত পেট্রোল অর্থাৎ E20 আলোচনার শিরোনামে। হ্যাঁ, আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকার পেট্রোলে অতিরিক্ত 20% ইথানল মেশানোর পরিকল্পনা করেছে। তবে অনেক গাড়ি চালক অভিযোগ করছে যে, এতে মাইলেজ এবং গাড়ির পারফরম্যান্স অনেকটাই কমে যাচ্ছে।
তবে এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রী নিতিন গডকরি সাফ জানিয়ে দিলেন, এবারের ডিজেলেও মেশানো হতে পারে আইসোবিউটানল নামক এক নতুন ধরনের জ্বালানি (Isobutanol in Diesel)। তবে কী প্রভাব পড়বে এর ফলে? লাভ নাকি ক্ষতি, কোনটা হবে?
কী বলেছেন পরিবহন মন্ত্রী?
পুনেতে প্রাজ ইন্ডাস্ট্রিজের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইথানল আমাদের যাত্রার শুরু মাত্র, শেষ নয়। আমি প্রাজ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ARAI-কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ডিজেলে আইসোবিউটানল মিশ্রণের কাজ শুরু করার জন্য। প্রথমে আপাতত 10% আইসোবিউটানল মিশিয়ে পরীক্ষা চলছে। এমনকি কিরলোস্করের সঙ্গে মিলিত হয়ে 100% আইসোবিউটানল চালিত সক্ষম ইঞ্জিন তৈরি করা হচ্ছ।
🚨 Union Minister Nitin Gadkari’s Ministry gave ARI Pune Rs. 15 Crores to study iso-Butanol in vehicles.
~ Internal reports say iso-Butanol can be BLENDED 10% with DIESEL 🤯BIG Development for Automobile industry 🎯 pic.twitter.com/Pbg15PwNzf
— The Analyzer (News Updates🗞️) (@Indian_Analyzer) August 24, 2025
মন্ত্রী এদিন আরও জানিয়েছেন, দেশে পেট্রোলের তুলনায় ডিজেলের ব্যবহার কয়েক গুণ বেশি। দূষণের বড় উৎস মূলত ডিজেল এবং পেট্রোল। তাই ভবিষ্যতে আইসোবিউটানল সেই সমস্যার সবথেকে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
আইসোবিউটানল আসলে কী?
জানিয়ে রাখি, আইসোবিউটানল হল একটি বর্ণহীন দাহ্য তরল জৈব যৌগ। সাধারণত পেইন্ট বা কোচিং-এর সলভেন্ট হিসেবে এটিকে ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি জ্বালানি সংযোজক হিসেবেও এটিকে ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য, এটি উৎপাদিত হতে পারে পেট্রোলিয়াম বা বায়োমাস থেকে।
ডিজেলে আইসোবিউটানল মেশালে কী কী সুবিধা হবে?
ডিজেলে আইসোবিউটানল মেশালে প্রথমত গাড়ির ফুয়েল এফিসিয়েন্সি অনেকটাই বাড়বে। দ্বিতীয়ত কম সালফার এবং ক্ষতিকর উপাদান থাকায় ধোঁয়া এবং দূষণ অনেকটাই কমবে। তৃতীয়ত, গ্রীন হাউজ গ্যাস কমাবে অর্থাৎ, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, পার্টিকুলেট ম্যাটার ইত্যাদি দূষণ উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। এর পাশাপাশি বিশেষ কোনো পরিবর্তন ছাড়াই ডিজেল ইঞ্জিনে এই আইসোবিউটানল যুক্ত ডিজেল ব্যবহার করা যাবে এবং ইঞ্জিন আরো ভালো থাকবে।
প্রসঙ্গত, SAE-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ডিজেলে 5 থেকে 10 শতাংশ আইসোবিউটানল মেশানো হলে ব্রেক থার্মাল এফিসিয়েন্সি অনেকটাই বেড়েছে এবং প্রতি ইউনিট শক্তি উৎপাদনে জ্বালানির খরচে কমেছে। পাশাপাশি কার্বন এমিশন ও ধোঁয়ার ঘনত্ব স্পষ্টভাবে হ্রাস পেয়েছে। এমনকি NOx নির্গমন সামান্য হলেও কমেছে।
আরও পড়ুনঃ মুকুব থেকে অর্ধেক হবে পুরনো চালান! ১৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় বসছে লোক আদালত
ভারতে কতটা ডিজেল ব্যবহৃত হয়?
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের মোট অপরিশোধিত তেল খরচের প্রায় 10%-ই ডিজেল। সেই হিসাবে 2024-25 অর্থবর্ষে ডিজেলের খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় 91.4 মিলিয়ন টন, যা আগের থেকেও 2% বেশি। পাশাপাশি 2025-26 অর্থবর্ষে তা বেড়ে 94.1 মিলিয়ন টনে পৌঁছাতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।