সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: এবার দেশের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক সাফ জানিয়ে দিল, E20 ইথানল মিশ্রিত পেট্রোল (E20 Petrol) শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধব নয়, বরং গাড়ির কোয়ালিটি আর পারফরম্যান্স বাড়াতেও সাহায্য করে। এমনকি কৃষকদের আয় বৃদ্ধি বা বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়েও বিরাট ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি বীমা সংক্রান্ত যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
E20-এর সুবিধা
পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস মন্ত্রক দাবি করছে, E20 অর্থাৎ 20% ইথানল এবং 80% পেট্রোলের মিশ্রণের জ্বালানি E10-এর তুলনায় প্রায় 30% কম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন করে। শহরের ব্যস্ত রাস্তায় দ্রুত গতি তোলার জন্য E20 এক্কেবারে সেরা। তবে পুরনো গাড়ির ক্ষেত্রে কিছু রাবারের পার্ট বা গ্যাসকেট বদলাতে হতে পারে। তবে তার খরচ খুবই কম।
এদিকে বেশ কিছু রিপোর্ট বলছিল যে, E20 ব্যবহার করলে মাইলেজ অনেকটাই কমে যাবে। তবে প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক জানাচ্ছে যে, মাইলেজ শুধুমাত্র জ্বালানির ধরনের উপরে নয়, বরং ড্রাইভিং-এর অভ্যাস বা গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ এমনকি টায়ারের চাপ ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। তাই E20 ব্যবহার করলেই যে মাইলেজ কমবে, এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই।
কৃষকদের আয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়
উল্লেখ্য গত 11 বছরে ইথানল মিশ্রিত তেল প্রায় 1.44 লক্ষ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করতে সাহায্য করেছে। আগে অপরিশোধিত তেল আমদানিতে যে পরিমাণে খরচ হত, এখন সেই অর্থই কৃষকদের হাতে সরাসরি যাচ্ছে। হ্যাঁ, 2025 সালে কৃষকদের হাতে প্রায় 40 হাজার কোটি টাকা যাবে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে প্রায় 43 হাজার কোটি টাকা। এর ফলে আখ চাষিদের বকেয়াও একেবারে শূন্য নেমে এসেছে এবং ভুট্টা চাষও এখন লাভজনক হচ্ছে।
এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি উঠেছিল যে, E20 ব্যবহার করার ফলে নাকি গাড়ির বীমা অকার্যকর হয়ে যাবে। তবে ভারতীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে যে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচার। এক বীমা সংস্থার টুইটারের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েই এরকম ভাবে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে। বাস্তবে E20 ব্যবহার করলে কোনও গাড়ির বীমা বাতিল হয় না।
তবে জানিয়ে রাখি, E20 তৈরিতে ব্যবহৃত ইথানলের গড় ক্রয় মূল্যই দাঁড়াচ্ছে প্রায় 71.32 টাকা প্রতি লিটার, যা পরিশোধিত পেট্রোলের তুলনায় কিছুটা হলেও বেশি। আর গত কয়েক বছরেই C-heavy মোলাসেস থেকেই ইথানলের দাম 24% এবং ভুট্টা ভিত্তিকে ইথানলের দাম ও 36% ঊর্ধ্বগতিতে ঠেকেছে। ফলে পাম্পের দামেও তেমন কোনও ছাড় আসেনি।
আরও পড়ুনঃ “ভারতের সাথে সম্পর্ক আগের মতোই আছে”, ট্রাম্পের কড়াকড়ির মাঝেই বার্তা ওয়াশিংটনের
পাশাপাশি E20 ব্যবহার করে 245 লক্ষ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল আমদানি এড়ানো গিয়েছে এবং প্রায় 735 লক্ষ মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করা সম্ভব হয়েছে, যা 30 কোটি গাছ লাগানোর সমান। তাই E20 নিয়ে যে সমস্ত গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। অযথা চাপ নেওয়ার কোনও কারণ নেই।